নারীরা শুধু ঘরের ভেতর অবৈতনিক গৃহস্থালি কাজের ভারই বহন করছেন না, কর্মক্ষেত্রেও পুরুষদের ছাপিয়ে নেতৃত্ব দেখাচ্ছেন। এ অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়েই প্রকৃত উন্নয়নকে উদযাপন করা সম্ভব—ঢাকায় আয়োজিত এক সংলাপে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন বক্তারা।
সোমবার রাজধানীর গুলশানের ক্রাউন প্লাজা হোটেলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত “Recognition: A First Step Towards Gender Equality” শীর্ষক সংলাপে এ আলোচনা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, কর্মজীবী নারীরা শিগগিরই তাদের সন্তানদের কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়ার আইনি অধিকার পাবেন। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, প্রতিটি অফিসে বাধ্যতামূলক ডে কেয়ার সুবিধা নিশ্চিত হলে এটি হবে ভবিষ্যতের জন্য এক পথপ্রদর্শক পদক্ষেপ।
সংলাপে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হাউসহোল্ড প্রোডাকশন স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট (HPSA) রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে অবৈতনিক গৃহস্থালি কাজের বার্ষিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১৮.৯ শতাংশ সমান। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ অবদান নারীদের, যা জিডিপির ১৬.১৪ শতাংশের সমান।
এমজেএফ-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, “আমরা এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখেছি, যেখানে নারীরা ঘরে সম্মানিত হবেন এবং পারিবারিক সহিংসতার শিকার হবেন না। অবৈতনিক গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি সেই স্বপ্ন পূরণের মাইলফলক।”
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমজেএফ-এর পরিচালক (রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রোগ্রামস) বনশ্রী মিত্র নিয়োগী। তিনি বলেন, “এ ধরণের সমীক্ষার অর্থায়ন প্রায়ই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা করে থাকে। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে এসে দায়িত্ব নিতে হবে।”
আয়াত ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী নুসরাত আমান বলেন, পুরুষদের কাজকে ‘উদযাপন’ নয়, বরং সমান দায়িত্ব হিসেবে দেখা উচিত।
এডিবি-এর প্রিন্সিপাল সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট নাসীবা সেলিম মনে করেন, সমাজে গৃহস্থালি কাজ নারীদের স্বাভাবিক দায়িত্ব—এ মনোভাব ভাঙতে হবে। একই সুরে ইউএন উইমেন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, নারী-পুরুষের যৌথ প্রচেষ্টা অবৈতনিক যত্নমূলক কাজের ক্ষেত্রে গেম চেঞ্জার হতে পারে।
কানাডিয়ান হাই কমিশনের প্রতিনিধি স্টেফানি সেন্ট-লরেন্ট ব্রাসার্ড উল্লেখ করেন, গৃহস্থালি কাজ কোনও ব্যয় নয়, বরং এটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য একটি বিনিয়োগ।
এমজেএফ-এর গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারপারসন পরভীন মাহমুদ এফসিএ বলেন, নারীর অবৈতনিক কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া এমজেএফ-এর দীর্ঘদিনের অ্যাডভোকেসির সাফল্য। “সমাজে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এখন জরুরি।”
বক্তারা বলেন, নারীর অবদান স্বীকৃতি দিলে শুধু পরিবার নয়, গোটা সমাজেই সমতা ও ন্যায়সংগত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।