হ্যানয়, ২৪ সেপ্টেম্বর — বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি খাঁং থান লোং জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা “অব্যাহত থাকবে” এবং একই সময়ে ভিয়েতনাম “অতিরিক্ত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA)”-এর সুযোগ খুঁজছে—এই ঘোষণা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিকে নতুন বাজার ও বিনিয়োগের পথ খুলে দেওয়ার বার্তা দিল।
২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে ভিয়েতনামের মোট রপ্তানি ২৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার—যার ২৯% যায় যুক্তরাষ্ট্রে (মূলত ইলেকট্রনিক্স, কাপড়, জুতা)। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ২০২৪-এর শেষ দিকে “মার্কেট-অ্যাকসেস অ্যান্ড কারেন্সি ম্যানিপুলেশন” নিয়ে যে তদন্ত শুরু হয়, তার শুনানি এখনও ওয়াশিংটনে চলছে। খাঁং থান লোং বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগগুলো শুনছি—শ্রম মান, ডিজিটাল কর, পরিবেশ—এই ইস্যুতে সহযোগিতা বাড়াতে প্রস্তুত।”
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (USTR) কার্যালয় গত সপ্তাহে হ্যানয়ে প্রযুক্তি-স্থানান্তর, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ও ক্লাউড সার্ভিস মার্কেট খোলার বিষয়ে নতুন প্রস্তাব দেয়। ভিয়েতনামি পক্ষ জানিয়েছে, তারা আমদানি শুল্ক ক্রমশ কমিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫% গড়ে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে; বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোল্ট্রি, কৃষিযন্ত্র ও এলএনজি-তে শূন্য শুল্ক সুবিধা চাইছে। দু’পক্ষ আগামী নভেম্বরে APEC সম্মেলনের পাশে আলোচনার পরবর্তী রাউন্ডের পরিকল্পনা করছে।
একই সময়ে হ্যানয় “FTA বহুমুখীকরণ” নীতি গ্রহণ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নথিতে দেখা যায়:
ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ভিয়েতনাম FTA (EVFTA) ২০২০-এ কার্যকর; ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে “সাসটেইনেবিলিটি আপডেট” চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে।ইউরো-প্যাসিফিক (CPTPP) ও RCEP-এর আওতায় জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড—এই বাজারে শুল্ক ৯৮% পর্যন্ত শূন্য।নতুন লক্ষ্য: আফ্রিকান মহাদেশ—দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া ও ঘানার সঙ্গে সম্ভাব্য FTA সমীক্ষা শেষ হয়েছে; ২০২৬ সালের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর পরিকল্পনা।মধ্যপ্রাচ্য—আরব আমিরাত, ইসরায়েল ও ইরাকের সঙ্গে “সেক্টর-স্পেসিফিক” শুল্ক ছাড় চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য বিশ্লেষক সংস্থা BowerGroupAsia মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত মিত্রতা বজায় রেখেই ভিয়েতনাম চীন-প্লাস-ওয়ান সাপ্লাই চেইনে নিজেকে আরও দৃঢ় করতে চায়; নতুন FTA-গুলো তাদের রপ্তানি বাজারের ঝুঁকি ছড়িয়ে দেবে। ভিয়েতনাম শ্রম মজুরি গড়ে ঘণ্টায় ১.৮১ মার্কিন ডলার—চীনের চেয়ে ৩০% কম; তাই পোশাক ও ফুটওয়্যার খাতে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জও রয়েছে। পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো নতুন খনিজ ও বনায়ন প্রকল্পে পানি দূষণের আশঙ্কা তুলে ধরেছে; আদিবাসী জমি অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয় বিক্ষোভ বাড়ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, FTA-তে “ট্রেড অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি” অধ্যায় রাখা হবে—শ্রম অধিকার, কার্বন সীমান্ত সমন্বয় ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করা হবে।