মালাউইয়ের ১৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাথমিক ফলাফলে সাবেক প্রেসিডেন্ট পিটার মুথারিকা (৮৫) এগিয়ে রয়েছেন। দেশটির নির্বাচন কমিশন (এমইসি) এক-চতুর্থাংশ কাউন্সিলের গণনা শেষে জানায়, তাঁর প্রাপ্ত ভোট ২০৩ হাজার ৪৪০, যেখানে বর্তমান প্রেসিডেন্ট লাজারাস চাকওয়েরা পেয়েছেন ১৫৩ হাজার ৫০৭ ভোট
।নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী—ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) মুথারিকা ও মালাউই কংগ্রেস পার্টির (এমসিপি) চাকওয়েরা—চতুর্থবারের মতো একে অপরের মুখোমুখি হলেন। ২০১৯ সালে মুথারিকার জয় বাতিল হওয়ার পর ২০২০ সালের পুনর্নির্বাচনে চাকওয়েরা বিজয়ী হন; এবারের লড়াইকে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
ভোটগ্রহণের দিন সকালে দীর্ঘ লাইন দেখা গেলেও বিকেল নাগাদ উপস্থিতি কমে যায়; শেষ পর্যন্ত ভোটদানের হার দাঁড়ায় প্রায় ৬৫ শতাংশ, যা ২০২০ সালের ৮০ শতাংশের তুলনায় কম। গণনা চলাকালে কিছু ত্রুটির অভিযোগ ওঠে—লিলংগুয়ের তালিকেন্দ্রে নিরাপত্তা সীলবিহীন ট্যালি কিট পৌঁছানো, ১৩ জেলায় অনিয়মের দাবি এবং আটজন ডাটা-ক্লার্ককে ‘কারচুপির’ অভিযোগে গ্রেপ্তার। এমইসি জানিয়েছে, সব ভোট যাচাই-বাছাই করে আগামী বুধবারের মধ্যে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে।
দেশটির মূল্যস্ফীতি প্রায় ৩০ শতাংশ, বিদেশি মুদ্রার সংকট ও জ্বালানি-সংকট চরমে। রাজধানী লিলংগুয়ে এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ২০ মার্কিন ডলার, যেখানে অধিকাংশ মানুষ দিনে ২ ডলারের কমে জীবিকা নির্বাহ করে। ভোটারদের অনেকেই বলছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থানই তাঁদের প্রধান প্রত্যাশা।
পিটার মুথারিকা ২০১৪-২০২০ মেয়াদে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বরাদ্দের রেকর্ড তুলে ধরে ভোট চেয়েছেন। তবে সেই সময় দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছিল। নির্বাচনী সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আজ আমরা নতুন করে আশার বার্তা দিচ্ছি; দেশকে আবার উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে চাই।’
বর্তমান প্রেসিডেন্ট চাকওয়েরা ২০২০ সালে ‘টনসে জোট’-এর ব্যানারে বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। জোট ভেঙে যাওয়া, অর্থনৈতিক মন্দা ও দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানের ধীরগতির কারণে জনপ্রিয়তা কমেছে। তাঁর দল বলছে, ‘অনিয়মের’ প্রমাণ পাওয়ায় ফল পাল্টাতে পারে।
মালাউইয়ের সংবিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে ৬০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ড হবে। প্রাথমিক ধারায় মুথারিকা ৪১-৪৩ শতাংশ ও চাকওয়েরা ৩১-৩৩ শতাংশ সমর্থন পেতে পারেন বলে জরিপে ছিল। ফলে রান-অফের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না কেউ।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও দক্ষিণ আফ্রিকান উন্নয়ন সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষক দল জানিয়েছে, ফল প্রকাশে স্বচ্ছতা ও ডাটা সুরক্ষা নিশ্চিত করা না হলে ফলাফল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। নির্বাচন কমিশন বলছে, ‘আমরা কোনো চাপেই তাড়াহুড়ো করব না; নির্ভুল ফলই আমাদের লক্ষ্য।’
রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৮টি জেলার মধ্যে ১০টির ফল আসছে; বাকি ভোট গণনা শেষে আইন অনুযায়ী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে। দুই প্রধান দলই জয় দাবি করায় দেশজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে; পুলিশ ও সেনা সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অবস্থান নিয়েছে।