নিউইয়র্কে আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফররত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলের গাজা অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পূর্ণ স্বীকৃতি ত্বরান্বিত করার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবেন। একই সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট শনিবার ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, “গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় ও ভূখণ্ড দখলের প্রচেষ্টা বন্ধে আমরা সব রাষ্ট্রকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানাব।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘের মঞ্চে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পূর্ণ সদস্যপদের দাবি জোরালো হলে দুই-রাষ্ট্র সমাধান (Two-State Solution) বাস্তবায়নের পথ সহজ হবে।
এরদোয়ান জানান, নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে “তুরস্ক-মার্কিন সম্পর্কের কৌশলগত অংশীদারিত্ব” পুনর্বিন্যাস, এফ-১৬ আপগ্রেড প্যাকেজের স্বচ্ছতা এবং সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ পদক্ষেপের বিষয়টি উত্থাপন হবে।
একই সফরে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে “আন-অফিশিয়াল” বৈঠকের সম্ভাবনাও রয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আঙ্কারা দামেস্কের সঙ্গে কূটনৈতিক পুনঃসম্পর্ক স্থাপনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এই সাক্ষাৎ দেখছে। এরদোয়ান বলেন, “সিরিয়ায় স্থায়ী স্থিতিশীলতা আসলেই আমাদের নিরাপত্তা সীমান্তেও শান্তি ফিরবে।”
২০২৫ সালের মে মাসে তুরস্ক-মার্কিন সম্পর্কে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয় যখন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস এফ-১৬ বিক্রি স্থগিতের হুমকি দেয়। এরদোয়ানের এই সফরকে ঐ উত্তেজনা প্রশমনের সুযোগ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পূর্ণ সদস্যপদের প্রস্তাব ২০১১ সালে নিরাপত্তা পরিষদে আটকে যায় যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে। বর্তমানে ১৪৫-এর বেশি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি সদস্য এখনও সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।
তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক হাসান উনাল বলেন, “এরদোয়ান চান জাতিসংঘের মঞ্চ ব্যবহার করে ফিলিস্তিন ইস্যুতে জনমত গঠন করতে; একই সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিতে চান, ন্যাটো-সীমার বাইরেও আঙ্কারার প্রভাব কৌশল গুরুত্বপূর্ণ।”
উপসংহারে এরদোয়ান জোর দেন, “আমরা কেবল তুরস্কের নয়, সমগ্র অঞ্চলের স্থায়ী শান্তি চাই। যুক্তরাষ্ট্র সফরে এই বার্তাই মূলত আমি সব পক্ষকে জানাব।”