অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম কোম্পানি অপটাস স্বীকার করেছে, গত সোমবারের ১৩ ঘণ্টা জরুরি কল সেবা বন্ধ থাকার পেছনে ‘নিয়মিত নেটওয়ার্ক আপগ্রেড প্রক্রিয়া থেকে বিচ্যুতি’ দায়ী; এই বিপর্যয়ে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
সিডনি সময় সোমবার ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে অপটাসের ভয়েস-ওভার-এলটিই (ভোল্টিই) প্ল্যাটফর্মে রুটিন সফটওয়্যার আপগ্রেড শুরু হয়। কোম্পানির প্রকৌশল দল একটি ‘নতুন সার্ভার স্ক্রিপ্ট’ পরীক্ষা করছিল, যা পরবর্তীতে জানা যায়, জরুরি কল রুটিং টেবিল মুছে ফেলে। ফলে ০০০ (পুলিশ), ০০০ (ফায়ার) ও ০০০ (অ্যাম্বুলেন্স) নম্বরগুলো পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে সম্পূর্ণ সেবা পুনরায় চালু হয়।
নিউ সাউথ ওয়েলস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সিডনির পশ্চিমাঞ্চলে ৭৩ বছল বয়সী এক নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় মারা যান। ভিক্টোরিয়া রাজ্যে তিনটি পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় আহতরা সময়মতো ইমার্জেন্সি কল করতে না-পেরা হাসপাতালে দেরিতে পৌঁছায়; তাঁদের মধ্যে এক কিশোরসহ দু’জনের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ‘যদি কল সুবিধা সচল থাকত, জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো বলে প্রাথমিক মূল্যায়ন।’
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে অপটাস সিইও বেকি বে বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠিত চেঞ্জ-ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল থেকে সরে গিয়েছিলাম—নতুন স্ক্রিপ্ট পরীক্ষা না-করেই লাইভ সিস্টেমে পুশ করা হয়। এটি মানবীয় ত্রুটির ফল।’ কোম্পানিটি ঘোষণা দিয়েছে:
– অস্ট্রেলিয়ান কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মিডিয়া অথরিটির (ACMA) পূর্ণ তদন্তে সহযোগিতা
– স্বাধীন বাহ্যিক পর্যালোচক নিয়োগ, ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ
– জরুরি কল ব্যবস্থায় ১০০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার বিনিয়োগ, ‘ডুয়েল-রেডান্ডেন্সি’ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা
ACMA প্রধান ওয়েন র্যামসে বলেন, ‘চারটি প্রাণহানি অগ্রহণযোগ্য। আমরা অপটাসকে বাধ্যতামূলক অডিটের আওতায় আনব এবং প্রয়োজনে লাইসেন্স শর্ত কঠোর করব।’ টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মিশেল রোল্যান্ড জানিয়েছেন, সরকার ‘সিভিল পেনালটি’ আরোপ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণের বিষয় বিবেচনা করছে।
টেলস্ট্রা ও ভোডাফোন অস্ট্রেলিয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলে, ‘আমরা নিজেদের নেটওয়ার্কে অতিরিক্ত রেডান্ডেন্সি যাচাই করছি এবং অপটাসের ত্রুটির কেস স্টাডি হিসেবে ব্যবহার করব।’ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ঘটনাটি সমগ্র খাতের জন্য ‘ওয়েক-আপ কল’ হিসেবে কাজ করবে।
অপটাস জানিয়েছে, আগামী তিন মাসে সব জরুরি কল রুট ‘রিবার-টেস্ট’ করা হবে এবং প্রতিটি আপগ্রেডের আগে ‘সিমুলেশন ল্য’-তে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে বলে কোম্পানি সূত্র জানা গেছে।