আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (IEA) জানিয়েছে, বিশ্বের ক্রিয়াশীল তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর “স্বাভাবিক পতনের হার” (natural decline rate) গত পাঁচ বছরে গড়ে প্রতি বছর ০.৮ শতাংশ বেড়ে ২০২৪ সালে ৮.১%-এ পৌঁছেছে, যা গত দশকের সর্বোচ্চ। শেল ও গভীর সমুদ্রের উচ্চ-পতনাঙ্ক সম্পদের ওপর নির্ভরতা বাড়ায় বর্তমান উৎপাদন স্তর ধরে রাখতেই এখন গত দশকের তুলনায় ৩০% বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে বলে সংস্থাটি সতর্ক করেছে।
প্যারিসভিত্তিক আইইএ-এর “ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক ২০২৫ (প্রি-রিলিজ)” অনুযায়ী—
– ২০৩০ সালের মধ্যে শেল ও গভীর-জলের উৎপাদন বিশ্ব মোট সরবরাহের ৩৫% ছাড়িয়ে যাবে; কিন্তু এসব ক্ষেত্রের প্রথম-বর্ষ পতন হার ১৫-২৫%, যা কনভেনশনাল ক্ষেত্রের দ্বিগুণ।
– সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন মাঠ আবিষ্কারের হার ২০১০-এর অর্ধেক; ফলে উৎপাদন ক্ষতিপূরণের জন্য প্রতি বছর ৪.৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ও ১২০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাসের নতুন ক্ষমতা যোগ করতে হবে।
– বর্তমান প্রবৃদ্ধির পথে ২০৩৫ সাল নাগাদ বার্ষিক মূলধন ব্যয় ৬৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে হবে; অথচ ২০২৪ সালে খাতটি ব্যয় করেছে ৫২০ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ঘাটতি ২৫%।
“উৎপাদন বজায় রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে,” বলেন আইইএর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরোল। “যদি বিনিয়োগ না বাড়ে, ২০৩০ সালের মধ্যে সরবরাহ ঘাটতি ৩-৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেল-সমতুল্য প্রতিদিনে পৌঁছাতে পারে, যা ভোক্তাদের জন্য উচ্চ মূল্য ও বাজার অস্থিরতার ইঙ্গিত,” তিনি যোগ করেন।
শেল খাতে যুক্তরাষ্ট্রের পার্মিয়ান বেসিনের উৎপাদন গত দুই বছরে ১.২ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন বেড়েছে; কিন্তু উচ্চ-পতন হারের কারণে প্রতি বছর ৬০% নতুন ভেল “শুধু ক্ষতিপূরণ” কাজে ব্যয় হচ্ছে। নরওয়ের জোহান সভেড্রপ, ব্রাজিলের প্রি-সাল্ট ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আদনক্সও একই চাপে রয়েছে। আইইএ জানায়, গভীর-সমুদ্র ক্ষেত্রগুলোর গড় উৎপাদন জীবন ৭ বছরে নেমে এসেছে, যা ২০০০ সালের অর্ধেক।
জ্বালানি কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মূলধন ব্যয় বাড়ানোর আগে তারা দীর্ঘমেয়াদী চাহিদা নিশ্চয়তা ও নীতি স্থিরতা চায়। শেল-জায়ান্ট ডায়মন্ডব্যাক এনার্জির সিইও ট্র্যাভিস স্টাইসেল বলেন, “উচ্চ পতন হার মানেই উচ্চ রিপ্লেসমেন্ট খরচ; শেয়ারহোল্ডার রিটার্নের চাপে আমরা কেবল উৎপাদন বাড়াতে পারি না”। ইউরোপীয় তেল মেজর শেল ২০২৫ সালে ক্যাপেক্স ১৫% বাড়িয়ে ২৮ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করলেও, তার ৭০% নির্গমন-হ্রাস ও নবায়নযোগ্য প্রকল্পে যাচ্ছে।
আইইএ প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে—
১. সরকারগুলোর উচিত শেল ও গভীর-সমুদ্ধ ক্ষেত্রে দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া, তবে পরিবেশগত নজরদারি বজায় রাখা;
২. উত্তোলন-প্রযুক্তি (EOR, CCUS) উন্নয়নে গবেষণা-ভর্তুকি বাড়ানো;
৩. নতুন কনভেনশনাল ক্ষেত্র আবিষ্কারে সিসমিক জরিপ ও খনিজ-ডাটা উন্মুক্ত করা।
“বিনিয়োগ না বাড়লে ভবিষ্যতে উচ্চ মূল্যের পাশাপাশি সরবরাহ সুরক্ষাঝুঁকি বাড়বে,” সতর্ক করেন বিরোল। প্রতিবেদনটি পূর্ণাঙ্গভাবে অক্টোবরে প্রকাশিত হবে, যেখানে নীতি-কৌশল ও খাত-ভিত্তিক পথনির্দেশ দেওয়া হবে।