চা-বাগানের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজার জেলায় কয়েকদিন ধরে চলছে তাপদাহ । তাপমাত্রা কখনো ৩৫, কখনো বা ৩৮ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। ভ্যাপসা গরমে জনজীবন হাঁসফাঁস করছেন চা শ্রমিকসহ দিনমজুরেরা। প্রখর রৌদ্রের মধ্যে কাজ করে কেউ কেউ হচ্ছেন অসুস্থ, কমে গেছে চা উৎপাদনও। তবুও এই গরমে থেমে নেই জীবন সংগ্রামের জীবিকার তাগিদে কর্ম জীবন। চা বাগানে দেখা গেলো, প্রখর তাপের রৌদ্রে মাথায় করেই কাজ করছেন চা শ্রমিকরা। কাজের মাঝেই অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। নারী চা শ্রমিক কবিতা হাজরা জানান, “এই রোদে কাজ করা যায় না। একটু পর পর গাছের ছায়ায় বসে পড়তে হয়। মাথা ঘুরায়, বুক ধড়ফড় করে।”তবুও চা শ্রমিকদের জীবিকা যেমন থেমে নেই, তেমনি প্রকৃতির এই উত্তাপও যেন দয়া করছে না। এখন শুধু একটুখানি বৃষ্টির অপেক্ষা, যা হয়তো কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারে এই গরমে ক্লান্ত মানুষগুলোর জীবন।
আরেকজন শ্রমিক সবিতা গোয়ালা বলেন, “আগে প্রতিদিন ৪৫-৫০ কেজি পাতা তুলতাম, এখন ২৫-৩০ কেজির বেশি তুলা হয় না। রোদে শরীরে আর সয় না।”এই তীব্র গরমের প্রভাব পড়েছে চা পাতার বৃদ্ধির বা উৎপাদনের উপরও। চা বাগান কর্তৃপক্ষ জানান, গরমে চা পাতা কুঁড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা সামগ্রিক উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে। আবহাওয়া অফিস শ্রীমঙ্গলের পর্যবেক্ষক মো. আনিসুর রহমান বলেন, “৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি হলে মৃদু তাপদাহ, ৩৮-এর ওপরে গেলে সেটা হয় মাঝারি তাপদাহ। বর্তমান পরিস্থিতি মাঝারি তাপদাহের দিকেই যাচ্ছে। এমন আবহাওয়া দু-একদিন থাকতে পারে। তবে হালকা বৃষ্টি হলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে।”এদিকে চিকিৎসকরা এ অবস্থায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. বিনেন্দু ভৌমিক বলেন, “এই গরমে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, ঘর্মাতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই ছায়ায় কাজ করা, পানি খাওয়া এবং রৌদ্রে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছি।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রৌদ্রে কাজ না করাই ভালো। সম্ভব হলে ছায়ায় থেকে কাজ করতে হবে।”চা শ্রমিকদের অনেকেই এমন পরামর্শ জানেন না কিংবা জানলেও মানতে পারেন না। জীবিকার তাগিদে রোদ মাথায় নিয়েই তাদের জীবন সংগ্রাম চলছে প্রতিদিন। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে প্রশাসনের সহায়তা আর সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন স্থানীয়রা। বিপদগ্রস্ত হচ্ছে দিনমজুর, রিক্সা চালক সহ খেটে খাওয়া অসহায় মানুষ গুলো।