পূর্ব আফগানিস্তানে গত ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে আঘাত হানা দুটি বড় ভূমিকম্পে প্রায় ২,২০০ জন নিহত ও হাজারো মানুষ আহত হওয়ার পর শুক্রবার ভোর ও দুপুরে আরও দুটি শক্তিশালী পরকম্পন (aftershock) অনুভূত হয়েছে। নতুন এই ঝাঁকুনি উদ্ধারকাজে বিলম্ব ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পথে নতুন বাধা তৈরি করেছে।
জাতিসংঘের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানায়, প্রথম পরকম্পন—মাত্রা ৫.৪—ভোর ৩টা ৫২ মিনিটে নানগরহার প্রদেশের খোস্ত জেলায় আঘাত হানে; কেন্দ্রের গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। এর ১১ ঘণ্টা পর একই অঞ্চলে ৫.১ মাত্রার আরেকটি ঝাঁকুনি আসে। স্থানীয় দুর্যোগ কর্তৃপক্ষ বলছে, দুটি ধাক্কায় আরও অন্তত ১০০ বাড়ি পুরোপুরি ধসে পড়েছে এবং কিছু সড়ক ও সেতু চূর্ণ হয়েছে, যা আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ কঠিন করে তুলছে।
তালিবান সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বরাতে রয়টার্স জানায়, বুধবার-বৃহস্পতিবারের প্রধান ভূকম্পনে নানগরহার ও পার্শ্ববর্তী পাকতিকা প্রদেশে মৃতের সংখ্যা ২,২০০ ছাড়িয়েছে; আহত হয়েছেন প্রায় ৯,০০০ জন। ১,৫০০-র বেশি গ্রাম সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস; ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। নতুন পরকম্পনার পর আরও কিছু আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো অতিরিক্ত প্রাণহানির খবর নিশ্চিত হয়নি।
জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো সীমাবদ্ধ পরিবহন ও খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও তাৎক্ষণিক ত্রাণ পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানায়, আহতদের জন্য ৪০ টন জরুরি ওষুধ ও সার্জিক্যাল সরঞ্জাম ইতিমধ্যে কাবুলে পৌঁছেছে, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি পথে পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে। তালিবান কর্তৃপক্ষ বিদেশি সহায়তা গ্রহণে সম্মতি দিলেও বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে কাস্টমস জটিলতা ও নিরাপত্তা পরীক্ষার অভাবে সহায়তা বিতরণ ধীর গতিতে চলছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, “আফগানিস্তানের জনগণের পাশে দাঁড়ানো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক দায়িত্ব।” যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাৎক্ষণিকভাবে ৪ কোটি মার্কিন ডলারের ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। চীন ও ভারতও নিজ নিজ বিমানবাহিনীর মাধ্যমে তাঁবু, কম্বল ও খাবার পাঠানোর কথা জানিয়েছে।