ফ্রান্সের রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থা ইডিএফ-এর কর্মীরা সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট কাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে এই ধর্মঘট দেশটির জ্বালানি খাতের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে।
প্যারিস, ১ সেপ্টেম্বর: ফ্রান্সের শীর্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিসিটে দে ফ্রান্স (ইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের কর্মীরা ১ সেপ্টেম্বর রাত ৭টা (জিএমটি) থেকে ৪ সেপ্টেম্বর একই সময় পর্যন্ত তিন দিনের ধর্মঘটে যাবেন। এই ধর্মঘট সরকারের ২০২৬ সালের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট কাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ, যা প্রধানমন্ত্রী ফ্রঁসোয়া বায়রুর নেতৃত্বে ঘোষিত হয়েছে। ধর্মঘটের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ইডিএফ-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নোটিশ অনুযায়ী, এই ধর্মঘট ফ্রান্সের জ্বালানি খাতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যদিও অতীতের ধর্মঘটগুলো সাধারণত গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেনি। ২০১৯ সালে ইডিএফ-এর একটি ধর্মঘটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০% কমে গিয়েছিল, তবে গ্রিড বা গ্রাহকদের উপর এর প্রভাব ছিল সীমিত। এবারের ধর্মঘটে পারমাণবিক, জলবিদ্যুৎ এবং গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, যা ইডিএফ-কে বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উপর নির্ভর করতে বাধ্য করতে পারে।
এই ধর্মঘট ফ্রান্সে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনার অংশ। শ্রমিক ইউনিয়নগুলো, বিশেষ করে সিজিটি-এর নেতৃত্বে, বায়রুর বাজেট কাটের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়েছে। ইউনিয়ন নেতা সোফি বিনেট ঘোষণা করেছেন যে জ্বালানি খাতের কর্মীরা ২ সেপ্টেম্বর থেকে ধর্মঘটে যোগ দেবেন, এবং ১৮ সেপ্টেম্বর আরও বড় ধরনের প্রতিবাদের পরিকল্পনা রয়েছে। বায়রু ৮ সেপ্টেম্বর আস্থা ভোটের ঘোষণা দিয়েছেন, যা তার সংখ্যালঘু সরকারের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে, কারণ বিরোধী দলগুলো সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিয়েছে।
অতীতে, ইডিএফ-এর ধর্মঘটগুলো বিদ্যুৎ রপ্তানি হ্রাস করেছে এবং উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়েছে, তবে গ্রাহকদের উপর সরাসরি প্রভাব এড়ানো গেছে। ২০২৩ সালে, শ্রমিকরা “রবিন হুড” অপারেশনের মাধ্যমে স্কুল, হাসপাতাল এবং নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলোর জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছিল, যা সরকারের নিন্দা কুড়িয়েছিল। এই ধর্মঘটের মাধ্যমে শ্রমিকরা উচ্চতর মজুরি এবং গ্রাহকদের জন্য কম বিদ্যুৎ বিলের দাবি তুলেছে।
ফ্রান্সের জ্বালানি খাতে ধর্মঘটের ইতিহাস দীর্ঘ। ২০১৯ সালে “প্রজেক্ট হারকিউল” নামে পরিচিত পুনর্গঠন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ধর্মঘটে বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধি, পেনশন সংস্কার এবং কাজের পরিবেশ উন্নতির দাবিতে বারবার ধর্মঘট করেছে। এই ধর্মঘট ফ্রান্সের অর্থনীতি এবং জনজীবনে সীমিত প্রভাব ফেললেও, ইডিএফ-এর জন্য আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
ইউনিয়ন প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, “আমরা শুধু আমাদের মজুরির জন্য নয়, গ্রাহকদের জন্যও লড়াই করছি। সরকারের বাজেট কাট জ্বালানি খাতের দক্ষতা এবং স্থায়িত্বের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।” সরকার এখনও ধর্মঘটের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি, তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন যে এই ধর্মঘট রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরও তীব্র করতে পারে।