রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন পশ্চিমা বিশ্বের চাপ ও নিষেধাজ্ঞার মুখে একযোগে বেইজিংয়ে চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দিয়েছেন। এই তিন নেতার উপস্থিতি বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে তারা সম্মিলিতভাবে পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ৩ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিতব্য একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন যোগ দেবেন। এই কুচকাওয়াজ চীনের সেনাবাহিনীর আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সুযোগ। একই অনুষ্ঠানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপস্থিতিও নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সমাবেশ একাধারে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর জন্য একটি বড় কূটনৈতিক বিজয়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ভূ-রাজনৈতিক খেলায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের ওপর শি জিনপিংয়ের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। বিশেষত ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যখন পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে একঘরে করার চেষ্টা করছে, তখন এই বৈঠক মস্কোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সমর্থন এনে দেবে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। গত বছর পুতিনের পিয়ংইয়ং সফরে দুই দেশ একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তিতে দুই দেশের বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসনে তারা পরস্পরকে সহায়তার অঙ্গীকার করেছে। এই ঘনিষ্ঠতা পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
এদিকে, জাপানের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ও এশীয় দেশগুলোকে চীনের এই কুচকাওয়াজে যোগ না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। জাপান ও পশ্চিমা বিশ্বের বেশিরভাগ নেতাই এই অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া এবং ইরানকে ঘিরে একটি নতুন পশ্চিমাবিরোধী জোট গঠিত হচ্ছে। এই দেশগুলোর মধ্যে সামরিক, প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা ক্রমশ বাড়ছে। এই সম্মিলিত অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের জন্য নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে, যা শুধু ইউরোপ নয়, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ।