মার্কিন ও অন্যান্য পশ্চিমা কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন যে, ভিয়েতনামের একটি টাংস্টেন খনি ও শোধনাগার চীনের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে, যা প্রতিরক্ষা ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই খনিজের চীনের বাইরে সরবরাহকে সীমিত করতে পারে। চীন, যিনি বিশ্বের টাংস্টেন উৎপাদনের ৮৩% নিয়ন্ত্রণ করেন, সম্প্রতি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যা মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়েছে।
ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলের নুই ফাও কমপ্লেক্স, যা মাসান হাই-টেক ম্যাটেরিয়ালসের মালিকানাধীন, বিশ্বের চীনের বাইরে সবচেয়ে বড় টাংস্টেন খনি ও শোধনাগারগুলোর একটি। এই কমপ্লেক্সটি বার্ষিক প্রায় ৩,৪০০ মেট্রিক টন টাংস্টেন উৎপাদন করে, যা ২০২৪ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক ভিয়েতনামকে করে তুলেছে। এর শোধনাগারের ক্ষমতা বছরে ৬,৫০০ টন, যা অক্সাইড এবং অ্যামোনিয়াম প্যারাটাংস্টেট (এপিটি)-এর মতো পণ্য উৎপাদন করে, যা চীনের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। মাসান গ্রুপ এই সম্পদ বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এবং সূত্র জানায়, দুটি চীনা কোম্পানি বিদেশী ফার্মের মাধ্যমে এই ব্যবসায়ের শেয়ার কেনার জন্য প্রক্সি হিসেবে কাজ করছে।
টাংস্টেন একটি অত্যন্ত শক্ত ধাতু, যা প্রতিরক্ষা শিল্পে (যেমন, বর্ম-ভেদী গোলাবারুদ) এবং ইলেকট্রনিক্স শিল্পে (যেমন, সেমিকন্ডাক্টর) ব্যবহৃত হয়। ২০২৪ সালে চীন, যিনি বিশ্বের ৮৩% টাংস্টেন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করেন, ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানির জন্য লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা আরোপ করে, যার ফলে জুলাই মাসে রপ্তানি জানুয়ারির তুলনায় ১৭% কমে যায়। এর ফলে এপিটি’র দাম চীনে ৭১% এবং ইউরোপে ৫২% বেড়েছে। ভিয়েতনাম থেকে টাংস্টেন গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির ২২% এবং ইউরোপের ৮% জোগান দিয়েছে।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, এই খনি ও শোধনাগারে চীনের সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে চীন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজের রপ্তানিও সীমিত করেছে। মার্কিন কূটনীতিক এবং অন্যান্য পশ্চিমা কর্মকর্তারা সম্প্রতি নুই ফাও কমপ্লেক্সে একাধিকবার সফর করেছেন, যা এই উদ্বেগের তীব্রতা প্রকাশ করে। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং ইকিউ রিসোর্সেসের উপদেষ্টা অ্যান্ড্রু গোলেডজিনোস্কি বলেন, “এত গুরুত্বপূর্ণ একটি শোধনাগার যদি পশ্চিমা শিল্পের স্বার্থের সাথে সংঘর্ষী কোনো পক্ষের হাতে চলে যায়, তবে তা উদ্বেগের বিষয়।”
মাসান হাই-টেক ম্যাটেরিয়ালস এই কমপ্লেক্সটি লাভজনক করতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং এটি তাদের মূল খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও খুচরা ব্যবসার অংশ নয়। গত বছর তারা জার্মানিতে তাদের টাংস্টেন সাবসিডিয়ারি বিক্রি করে। এদিকে, খনির লাইসেন্স ২০২৮ সালের শুরু পর্যন্ত বৈধ, এবং কনসেশন নবায়নের বিলম্ব শোধনাগারের কার্যক্রম স্কেল ডাউন করতে বাধ্য করতে পারে।
হানয় পূর্বে সংবেদনশীল খাতে চীনের সম্পৃক্ততা বাধাগ্রস্ত করলেও, উৎপাদন খাতে বড় আকারের চীনা বিনিয়োগ এবং যৌথ রেল সংযোগ প্রকল্পের অনুমতি দিয়েছে। তবে, এই বিক্রয় প্রক্রিয়া হানয়ের প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে। মার্কিন দূতাবাস এবং ভিয়েতনামের পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে বিকল্প সরবরাহ চেইন তৈরির চেষ্টা করছে। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়ার সাংদং খনি সম্প্রতি পুনরায় চালু হয়েছে, যা বিশ্বের বৃহত্তম টাংস্টেন উৎসগুলোর একটি। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ২০২৭ সাল থেকে চীন থেকে টাংস্টেন ক্রয় নিষিদ্ধ করেছে, এবং কানাডার ম্যাকটাং খনিতে বিনিয়োগ করছে। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীনের বাইরে একটি সম্পূর্ণ সরবরাহ চেইন গড়ে তুলতে বছরের পর বছর সময় লাগবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, টাংস্টেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সরবরাহ চেইনের এই উত্তেজনা ইলেকট্রনিক্স ও উৎপাদন খাতে প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে দেশটি ক্রমবর্ধমানভাবে রপ্তানি-ভিত্তিক শিল্পের উপর নির্ভরশীল। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য বৈচিত্র্যময় সরবরাহ উৎস এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে।