ইংল্যান্ডের সেন্ট জর্জ ক্রস এবং ইউনিয়ন জ্যাক পতাকার ব্যাপক প্রদর্শন কিছু মানুষের কাছে জাতীয় গর্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, অন্যরা এটিকে চলমান অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অভিবাসনবিরোধী মনোভাবের প্রতীক হিসেবে দেখছেন। এই পতাকা প্রদর্শন বার্মিংহাম, টাওয়ার হ্যামলেটস এবং অন্যান্য এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, যেখানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই পতাকাগুলো সরিয়ে ফেলার বিষয়ে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করছে।[]
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইংল্যান্ড জুড়ে সেন্ট জর্জ ক্রস এবং ইউনিয়ন জ্যাক পতাকার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে বার্মিংহামের উইলি ক্যাসল এবং নর্থফিল্ডের মতো এলাকায়, যেখানে রাস্তার প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টে এই পতাকা ঝুলছে। এই ঘটনার পেছনে “অপারেশন রেইজ দ্য কালার্স” নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারণা কাজ করছে, যা কিছু গোষ্ঠীর দাবি অনুযায়ী জাতীয় গর্ব ও দেশপ্রেমের প্রকাশ। তবে, অনেকে এই পতাকা প্রদর্শনকে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভের সাথে যুক্ত বলে মনে করছেন, যা গত গ্রীষ্মে অভিবাসী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার পর থেকে তীব্র হয়েছে।
বার্মিংহামে, স্থানীয় গোষ্ঠী “উইলি ওয়ারিয়র্স” এই প্রচারণার নেতৃত্ব দিচ্ছে, যারা এই পতাকা প্রদর্শনের জন্য ১৮,০০০ পাউন্ডের বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছে। তারা দাবি করে যে এটি “ইতিহাস, স্বাধীনতা এবং অর্জনের প্রতি গর্বের” প্রকাশ। তবে, টাওয়ার হ্যামলেটসের মতো এলাকায়, যেখানে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বিদেশে জন্মগ্রহণকারী, এই পতাকাগুলো স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা স্ট্যানলি ওরোনসায়ে (৫২), যিনি নাইজেরিয়া থেকে এসেছেন, বলেন, “এই পতাকাগুলো দেখে আমার মনে হয় আমরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছি।”
স্থানীয় কাউন্সিলগুলো এই পতাকা সরিয়ে ফেলার বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বার্মিংহাম সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, তারা নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ল্যাম্পপোস্ট থেকে প্রায় ২০০টি পতাকা সরিয়েছে, কারণ এই পতাকাগুলো রাস্তার আলোর কাঠামোর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলও একই কারণে পতাকা সরিয়ে ফেলছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। কিছু বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন যে প্যালেস্টাইনের পতাকাগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঝুলতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ইংলিশ পতাকাগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলা হচ্ছে, যা তারা “দুই স্তরের পক্ষপাত” হিসেবে দেখছেন।
এই পতাকা প্রদর্শনের পেছনে ফার-রাইট গোষ্ঠীগুলোর সমর্থনও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। স্টিফেন ইয়াক্সলি-লেনন (টমি রবিনসন নামে পরিচিত) এবং ফার-রাইট গ্রুপ ব্রিটেন ফার্স্ট এই প্রচারণার সমর্থন জানিয়েছে, যার ফলে অনেকে এই পতাকাগুলোকে অভিবাসনবিরোধী এবং জাতীয়তাবাদী মনোভাবের সাথে যুক্ত করছেন। অ্যান্টি-রেসিজম ক্যাম্পেইনার লুইস নিলসেন বলেন, “এই পতাকা প্রদর্শন ফার-রাইটের জন্য একটি আবরণ হিসেবে কাজ করছে, যা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে।”
তবে, সবাই এই পতাকাগুলোকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন না। ইস্ট ইয়র্কশায়ারের হেসলের বাসিন্দা অ্যালেক্স স্মিথ, একজন সেনা ও বিমান বাহিনীর প্রবীণ, বলেন, “আমি আমার বাগানে ইউনিয়ন জ্যাক ঝুলিয়েছি শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে। এটি তাদের জন্য যারা আমাদের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন।” বার্মিংহামের কিছু বাসিন্দা এই পতাকাগুলোকে সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দ ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
এই ঘটনা ব্রিটেনে জাতীয় পরিচয় এবং পতাকার প্রতীকত্ব নিয়ে জটিল সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানী এলিস ক্যাশমোর মনে করেন, এই পতাকা প্রদর্শনের পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যার মধ্যে কিছু মানুষের পরিত্যক্ত বা উপেক্ষিত বোধ থেকে উদ্ভূত। গত গ্রীষ্মে অভিবাসী হোটেলের বাইরে বিক্ষোভ এবং অর্থনৈতিক চাপ, যেমন সম্ভাব্য কর বৃদ্ধি, এই প্রবণতাকে আরও উসকে দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পতাকা বিতর্ক আসন্ন স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের আগে আরও তীব্র হতে পারে। রিফর্ম ইউকে এবং নাইজেল ফ্যারাজের মতো রাজনীতিবিদরা এই প্রচারণাকে সমর্থন করছেন, যা ব্রিটেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, এই ঘটনা অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে, যেহেতু ইউকে-তে বাংলাদেশি প্রবাসীরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছেন। এই পরিস্থিতি তাদের নিরাপত্তা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে