পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কম্পিউটার এবং মোটরসাইকেল লোনের কিস্তি জমা সংক্রান্ত ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যেখানে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব নিযুক্ত করা হয়েছে সেই কর্মকর্তাকেই যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের মূল অভিযোগ রয়েছে।
পবিপ্রবিতে লোন কেলেঙ্কারির অভিযোগ তদন্তের জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবদুল লতিফ। সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুষদের প্রফেসর মো. জাকির হোসেন, প্রফেসর মো. হাসান উদ্দীন এবং অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপ-পরিচালক সমরেন্দু দাস। সদস্যসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্থ ও হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. জসীম উদ্দিনকে, যাঁর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ অনুসারে, পেনশন সেলের উপ-পরিচালক রাজীব মিয়া এবং ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট (ক্যাশিয়ার) আবু সালেহ ইছা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লোনের কিস্তি ব্যাংকে জমা না দিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। রূপালী ব্যাংকের ভুয়া রসিদ তৈরি করে শতাধিক শিক্ষকের টাকা গায়েব করা হয়েছে। সংগৃহীত অর্থের প্রায় ৯০ শতাংশ আত্মসাৎ করেছেন আবু সালেহ ইছা এবং ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জসীম উদ্দিন। সম্প্রতি রাজীব মিয়া প্রায় ৩২ লাখ টাকা জমা দিলেও আবু সালেহ কোনো অর্থ জমা দেননি। অভিযোগ রয়েছে যে, জসীম উদ্দিন তাঁকে রক্ষার চেষ্টা করছেন।
জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে উন্নয়নমূলক কাজে ঠিকাদারদের ফাইল আটকে কমিশন গ্রহণ, হিসাব বিভাগে উৎকোচ লেনদেন, অভিযুক্তদের টাকা ব্যবহার করে একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ এবং ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোনো ক্যাশবুক বা লোন রেজিস্টার সংরক্ষণ না করা অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষক-কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে, তিনি ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট আবু সালেহ ইছাকে সঙ্গে নিয়ে একটি দুর্নীতির চক্র গড়ে তুলেছেন।
দুর্নীতির চক্রের অভিযোগে বলা হয়েছে যে, অর্থ ও হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন অডিট শাখার মাধ্যমে বছরের পর বছর ভুয়া অডিট আপত্তির ভয় দেখিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছেন। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট টিমের সঙ্গে ‘ফিফটি-ফিফটি’ ভাগাভাগির চুক্তি হয়েছে বলে জানা যায়। ঠিকাদারদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন অনুষদের ল্যাব ইকুইপমেন্ট বাবদ আসা রাজস্ব খাতের ভ্যাট-ট্যাক্স জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা এবং শিক্ষা ছুটিতে যাওয়া শিক্ষকদের অতিরিক্ত দায়িত্বভাতা থেকে জোর করে টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে দুর্নীতির ছায়া পড়েছে বলে অভিযোগ। এতে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিল আটকে শতকরা ৩০ পয়সা হারে কমিশন নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বন্ধ থাকা প্রকল্প ফাইলও তাদের প্রভাবে আবার আটকে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে ২০১১-২০২৫ সালের পূর্ণাঙ্গ অভ্যন্তরীণ অডিটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন যে, এই অডিট শেষ হলে পুরো দুর্নীতিচক্রের আসল চিত্র প্রকাশ পাবে।
অভিযুক্ত জসীম উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন এবং ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং সচেতন মহলের দাবি যে, অভিযুক্ত হিসাব পরিচালক জসীম উদ্দিন, ক্যাশিয়ার আবু সালেহ ইছা সহ সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগ মুক্ত করে স্বাধীনভাবে তদন্ত করলে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম বেরিয়ে আসবে।