পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে বিরল প্রজাতির মৃদু বিষধর কাঁকড়া-ভুক পানিসাপ (Crab-eating Water Snake, Fordonia leucobalia) উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকালে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ও বনবিভাগের যৌথ উদ্যোগে প্রায় ২ ফুট লম্বা এই সাপটি উদ্ধার করে নিরাপদে অবমুক্ত করা হয়।
শনিবার (২৩ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে কুয়াকাটা সৈকতের পূর্বপাশ থেকে এই বিরল সাপটি উদ্ধার করেন ‘অ্যানিম্যাল লাভারস অফ পটুয়াখালী’র বন্যপ্রাণী উদ্ধারকর্মীরা। সৈকতের ওয়াটার বাইক চালক আব্দুল সালাম প্রথমে সাপটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনকে খবর দেন।
পরবর্তীতে উপকূল পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন (উপরা), অ্যানিম্যাল লাভারস অফ পটুয়াখালী, পৌরসভা কর্মী ও বনবিভাগের যৌথ উদ্যোগে সাপটি উদ্ধার করে নিরাপদে অবমুক্ত করা হয়।
অ্যানিম্যাল লাভারস অফ পটুয়াখালীর রেসকিউ এন্ড রিলিজ উইং প্রধান আসাদুল্লাহ হাসান মুছা জানান, “কাঁকড়া-ভুক পানিসাপ একটি বিরল প্রজাতির সাপ। এটি মৃদু বিষধর হলেও মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়।” তিনি আরও বলেন, “সাপটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি কাঁকড়াকে টুকরো টুকরো করে খায়, যা সাপের জগতে বিরল।”
সুন্দরবনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এই প্রজাতি পাওয়া যায় এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উপকূল পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক কে এম বাচ্চু বলেন, “উত্তাল ঢেউয়ের স্রোতে সাপটি সৈকতের বালিতে আটকে পড়েছিল। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। স্থানীয় ও পর্যটকরা ভিড় করলেও কেউ এটিকে মারেনি।” তিনি আরও জানান, পরে প্রশিক্ষিত টিম এসে বনবিভাগের সহায়তায় সাপটি উদ্ধার করে অবমুক্ত করে।
বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা কে এম মনিরুজ্জামান বলেন, “কাঁকড়া-ভুক পানিসাপ সুন্দরবনে পাওয়া বিরল ও মৃদু বিষধর পানিসাপ। এর প্রধান খাদ্য কাঁকড়া ও জলজ প্রাণী।” তিনি জানান, নিশাচর ও লাজুক স্বভাবের এই সাপ মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়।
তিনি আরও বলেন, “সঠিক তথ্য না জানার কারণে অনেক সময় মানুষ অকারণে সাপ মেরে ফেলে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”
উল্লেখ্য, কাঁকড়া-ভুক পানিসাপ একটি বিশেষ প্রজাতির সাপ যা প্রধানত উপকূলীয় এলাকার ম্যানগ্রোভ বনে বাস করে। এই সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Fordonia leucobalia এবং এটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ।