হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো ভারতের রাশিয়া থেকে ক্রুড তেল ক্রয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে এটি ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়ন করছে এবং ভারত-রাশিয়া-চীন সম্পর্কের গভীরতা মার্কিন সামরিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। তবে, ভারতের তেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অর্থনৈতিক প্রয়োজনের কারণে তারা রুশ তেল আমদানি অব্যাহত রাখবে।
হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত একটি মতামত প্রবন্ধে বলেছেন, “ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচিত হতে চায়, তবে তাকে সেই অনুযায়ী আচরণ করতে হবে।” তিনি অভিযোগ করেছেন যে ভারত রাশিয়ার নিষিদ্ধ ক্রুড তেলকে উচ্চমূল্যের রপ্তানি পণ্যে রূপান্তর করে মস্কোকে প্রয়োজনীয় মুদ্রা সরবরাহ করছে, যা ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে অর্থায়ন করছে। নাভারো আরও উল্লেখ করেছেন যে ভারতের রাশিয়া ও চীনের সাথে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের কারণে মার্কিন উন্নত সামরিক প্রযুক্তি হস্তান্তর করা ঝুঁকিপূর্ণ।
এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মাসের শুরুতে ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যার ফলে ভারত থেকে আমদানির উপর মোট শুল্ক ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে ভারতের রুশ তেল ক্রয়কে উল্লেখ করা হয়েছে। নাভারো জানিয়েছেন, “ভারত আমেরিকান ডলার ব্যবহার করে রাশিয়ার তেল ক্রয় করে, যা রাশিয়া তার সামরিক অভিযানে ব্যবহার করে, এবং এরপর যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। এই গণিত ঠিক কাজ করে না।”
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযোগের জবাবে বলেছে যে ভারতকে রুশ তেল ক্রয়ের জন্য অন্যায্যভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেরাও রাশিয়া থেকে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় অব্যাহত রেখেছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর ঐতিহ্যবাহী সরবরাহ ইউরোপে সরিয়ে নেওয়ায় ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি শুরু করে। এই আমদানি ভারতের ১৪০ কোটি জনগণের জন্য সাশ্রয়ী জ্বালানি মূল্য এবং শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়।”
ভারতের তেল মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলো জানিয়েছে যে রুশ ক্রুড তেলের আমদানি অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক, কারণ এটি ছাড়ের মূল্যে পাওয়া যায়। পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস সেল (পিপিএসি) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে রাশিয়া ভারতের তেল আমদানির ৩০ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করেছে। এই আমদানি ভারতের জ্বালানি সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সহায়তা করেছে।
এদিকে, ভারতের কৌশলগত অবস্থান জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ দেশটি রাশিয়া এবং চীনের সাথে সম্পর্ক জোরদার করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই মাসের শেষে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনার জন্য সোমবার ভারত সফর করছেন। এই কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলো ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত নীতির প্রেক্ষাপটে ভারত-চীন সম্পর্কের সতর্কতাপূর্ণ উন্নতি নির্দেশ করে।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের ২৫-২৯ আগস্ট নয়াদিল্লিতে পরিকল্পিত সফর বাতিল হয়েছে, যা প্রস্তাবিত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনাকে বিলম্বিত করেছে এবং ২৭ আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক থেকে মুক্তির আশা কমিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতের জন্য রুশ তেল থেকে সম্পূর্ণ সরে আসা অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের উপ-প্রধান অর্থনীতিবিদ শিলান শাহ বলেন, “ভারত তত্ত্বগতভাবে রাশিয়া ছাড়া অন্য উৎস থেকে তেলের চাহিদা মেটাতে পারে, তবে এটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে জটিল। ট্রাম্পের চাপের কাছে নতি স্বীকার করা দেশীয়ভাবে অগ্রহণযোগ্য হবে, এবং ভারত রাশিয়ার সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।”