চীনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকারীরা ক্রমবর্ধমান মন্থর প্রবৃদ্ধির সম্মুখীন হচ্ছেন, কারণ অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা বিরোধী নীতি এবং দুর্বল সম্পত্তি সহায়তা ব্যবস্থা অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে। বিশ্লেষকরা বাজারকে সহায়তার জন্য আরও সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা করলেও টেকসই ভোক্তা চাহিদার অভাব এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
চীনের অর্থনীতি ২০২৫ সালে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, কারণ সরকারের অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা কমানোর নীতি এবং সম্পত্তি খাতে অপর্যাপ্ত সহায়তা প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। গত বছরের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৪.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সরকারের ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার নিচে। সম্পত্তি খাত, যা অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালক, এখনও সংগ্রাম করছে, এবং নতুন আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি কমেছে।
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক অফ চায়না, জুলাই মাসে মূল ঋণের হার ১০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৩.৩৫ শতাংশ করেছে, তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন এটি অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য যথেষ্ট নয়। ব্লুমবার্গ ইকোনমিক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ এরিক ঝু বলেন, “সুদের হার কমানো একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, কিন্তু সম্পত্তি খাতের দুর্বলতা এবং ভোক্তা আস্থার অভাবের কারণে এটি স্বল্পমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে। টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আরও কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।”
অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা কমানোর জন্য চীনের কঠোর নীতিগুলো ইস্পাত, কয়লা এবং সিমেন্টের মতো শিল্পে উৎপাদন হ্রাস করেছে, যা স্থানীয় কর্মসংস্থানের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এদিকে, ভোক্তা ব্যয় বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রণোদনা, যেমন গাড়ি এবং গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ভর্তুকি, প্রত্যাশিত ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে। খুচরা বিক্রয় জুন মাসে মাত্র ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের রপ্তানি বৃদ্ধি পেলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্য উত্তেজনা সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যা চীনের রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতির জন্য আরও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, বিশ্লেষকরা আশা করছেন যে চীন সরকার আগামী মাসগুলোতে আরও আর্থিক এবং মুদ্রানীতি সহায়তা ঘোষণা করবে, যার মধ্যে সম্পত্তি খাতে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করা এবং ভোক্তা চাহিদা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
নোমুরার প্রধান চীন অর্থনীতিবিদ টিং লু বলেন, “চীনের অর্থনীতি একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সরকারের স্বল্পমেয়াদী উদ্দীপনা কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধির জন্য সম্পত্তি খাতের পুনরুদ্ধার এবং ভোক্তা আস্থা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছে, তবে এই সংস্কারের গতি এবং কার্যকারিতা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। আগামী তৃতীয় প্লেনারি সেশনে অর্থনৈতিক কৌশল নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা প্রত্যাশিত, যা চীনের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করতে পারে।