পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধিগ্রহণকৃত শত কোটি টাকার জমি দখল ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে বেহাত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কুয়াকাটা পর্যটন এলাকার প্রাণকেন্দ্র শূন্য পয়েন্টের আশপাশে পাউবোর জমিতে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, মার্কেট ও আবাসিক স্থাপনা। এক যুগ আগে অধিগ্রহণকৃত জমির সাইনবোর্ড উধাও হয়ে গেলেও প্রশাসনিক উদ্যোগের অভাবে দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় ব্যর্থতা অব্যাহত রয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ২০১৩ সালে কুয়াকাটা বেড়িবাঁধের ভিতরে তালগাছে লটকানো পাউবোর সাইনবোর্ড এখন আর নেই। মৌজা লতাচাপলীর ১২ একর ৯৬ শতাংশ জমির চারদিকে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা। স্থানীয়রা জানান, শিগগিরই তালগাছটিও কেটে ফেলা হবে। শূন্য পয়েন্টের পশ্চিম ও পূর্ব দিকে একই চিত্র। পাউবোর জমিতে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, মার্কেট ও আবাসিক প্রকল্প। এক শতক জমির বর্তমান বাজারমূল্য পাঁচ লাখ টাকা হলেও, সরকারি জমি রক্ষায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
কুয়াকাটা শূন্য পয়েন্টের পূর্ব দিকে পাউবোর প্রায় দুই একর জমি দখল করে ভরাট করা হয়েছে। মূল খতিয়ান নম্বর ৬৬২ থাকলেও ১২০৩ নম্বর একটি ভুয়া খতিয়ান তৈরি করে জমি দখল করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই এমপির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। যদিও তাঁরা এখন পদে নেই, কিন্তু দখলকৃত জমি উদ্ধার হয়নি। মহিপুরে পাউবোর সাড়ে ছয় একর জমি ও পুরনো অফিস ক্যাম্পাস অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। ফাঁসিপাড়া সংলগ্ন তিন একর জমি জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। একটি হাউজিং কোম্পানি কুয়াকাটায় পাউবোর ৭৫ শতক জমি দখল করেছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের অধিগ্রহণকৃত জমিতে গড়ে উঠেছে হোটেল, মার্কেট ও আবাসিক ভবন।
পাউবোর জমি মাছচাষসহ বিভিন্ন অজুহাতে এক থেকে চার বছরের ইজারা নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসের পেছনে গড়ে উঠেছে পাকা স্থাপনা। ২০১৮ সালে ২৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের তালিকা তৈরি করা হলেও আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাবলাতলা বাজারে পাউবোর জমি দখল করে বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। পাউবো প্রতি বছর সরকারি খাজনা পরিশোধ করলেও, জমি রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নেয়া হচ্ছে না।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, জমি উদ্ধারের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এক বছর আগে বেড়িবাঁধের বাইরে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও আদালতের নির্দেশনার কারণে কিছু উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। পূর্ব দিকে কিছু খাস জমি উদ্ধারে তালিকা তৈরিসহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, পর্যটন এলাকার পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য পাউবোর জমি উদ্ধার জরুরি। দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সরকারি সম্পত্তি স্থায়ীভাবে বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।