তেলের দাম কিছুটা কমেছে, কারণ ব্যবসায়ীরা রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সময়সীমা এবং সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছেন। বাজারের দৃষ্টি এখন চীন এবং ভারতের মতো প্রধান ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়ার দিকে, যদি মার্কিন ট্যারিফ কার্যকর হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার ০.৮% কমে প্রতি ব্যারেল ৭৯.৩৫ ডলারে এবং ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড ১.২% কমে ৭৬.৮৭ ডলারে নেমেছে। এই পতনের পেছনে রয়েছে ট্রাম্পের ৫০ দিনের আল্টিমেটাম, যেখানে তিনি রাশিয়াকে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেছেন, অন্যথায় রাশিয়ার তেল ক্রেতা দেশগুলোর (বিশেষ করে চীন, ভারত ও তুরস্ক) উপর ২৫-৫০% পর্যন্ত “সেকেন্ডারি ট্যারিফ” আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই হুমকির ফলে তেলের দামে স্বল্পমেয়াদি অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ING-এর বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, “তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের অভাব এবং এই হুমকি বাস্তবায়িত হবে না বলে বিশ্বাস বাজারের প্রতিক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করে। তবে, ট্রাম্প যদি এই ট্যারিফ কার্যকর করেন, তাহলে তেলের বাজারের দৃষ্টিভঙ্গি আমূল বদলে যাবে।” রাশিয়া দৈনিক ৭ মিলিয়ন ব্যারেলের বেশি ক্রুড তেল এবং পরিশোধিত পণ্য রপ্তানি করে, যার বড় অংশ চীন ও ভারতের মতো দেশে যায়।
চীন, বিশ্বের শীর্ষ তেল আমদানিকারক, ২০২৪ সালে রাশিয়ার তেলের প্রায় ২০% আমদানি করেছে, যেখানে ভারত রাশিয়ার সমুদ্রপথে আসা তেলের বৃহত্তম ক্রেতা হয়ে উঠেছে, যা তাদের মোট আমদানির ৩৫%। ট্যারিফ আরোপ হলে ভারত ও চীনকে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং আমেরিকা থেকে বিকল্প সরবরাহ খুঁজতে হবে, যা তেলের দাম এবং শিপিং খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে। ভারতের একজন শোধনাগার কর্মকর্তা বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের তেলের দাম ইতিমধ্যে বাড়ছে। আমাদের মধ্যপ্রাচ্য বা এমনকি মার্কিন তেলের দিকে যেতে হতে পারে।”
তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এই নিষেধাজ্ঞা বা ট্যারিফের প্রভাব সীমিত হতে পারে, কারণ রাশিয়া তার “শ্যাডো ফ্লিট” ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল রপ্তানি চালিয়ে যেতে পারে। এছাড়া, চীন তাদের বিশাল তেল মজুদ ব্যবহার করে আমদানি কমাতে পারে, যা তেলের দামের উপর চাপ কমাতে পারে।
এদিকে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার ঝুঁকি তেলের চাহিদা কমাতে পারে, যা দামের উপর নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি করছে। ট্রাম্পের ঘোষিত ১ আগস্ট থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা এবং ব্রাজিলের উপর ৩০% ট্যারিফ এবং তামার উপর ৫০% ট্যারিফও বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। এর জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৮৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের উপর প্রতিশোধমূলক ট্যারিফের তালিকা চূড়ান্ত করেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর সাথে সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা তেলের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করলেও, বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাজার এই ধরনের ধাক্কা শোষণে দক্ষ। তবে, ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়ন এবং চীন ও ভারতের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করবে তেলের দামের ভবিষ্যৎ গতিপথ।