পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ‘এফবি সাগরকন্যা’ নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সমুদ্রে টানা চার দিন ভেসে থাকার পর ৯ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ছয় জেলে: আবদুর রশিদ, নজরুল ইসলাম, রফিক, ইদ্রিস, হারুন এবং কালাম। উদ্ধারকৃত জেলেদের মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ভোররাতে আহত অবস্থায় কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া জেলেদের বরাতে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) ভোরে মহিপুর থেকে মাঝি আবদুর রশিদের নেতৃত্বে ১৫ জেলে নিয়ে ট্রলারটি গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে বঙ্গোপসাগরের শেষ বয়ার প্রায় ৭৫ কিলোমিটার গভীরে জাল ফেলার সময় হঠাৎ ঝড় ও উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি দুমড়ে-মুচড়ে ডুবে যায়। ঘটনার সময় একজন জেলে ঢেউয়ের তো�ড়ে হারিয়ে যান। বাকি ১৪ জন বাঁশ ও ফ্লোটের সাহায্যে ভাসতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে আরও পাঁচ জেলে ঢেউয়ের তো�ড়ে নিখোঁজ হন। চার দিন ভেসে থাকার পর সোমবার রাতে শেষ বয়া এলাকায় পৌঁছালে দুটি মাছ ধরার ট্রলার ৯ জেলেকে উদ্ধার করে মহিপুর মৎস্য বন্দরে নিয়ে আসে।
মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদ হাসান জানান, ট্রলার ডুবির ঘটনায় গত ২৬ জুলাই ট্রলার মালিক কিশোর হাওলাদার নিখোঁজ জেলেদের তথ্য উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। নিখোঁজ ছয় জেলের সন্ধানে পুলিশের উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।
উদ্ধার হওয়া এক জেলে, হাসান, বলেন, “জাল ফেলার সময় সাগর শান্ত ছিল। কিন্তু হঠাৎ ঝড় ও উত্তাল ঢেউয়ে ট্রলার তিন খণ্ড হয়ে ডুবে যায়। আমরা দুজনকে প্রথমেই হারাই। পরে ভাসতে ভাসতে আরও চারজন হারিয়ে যান। আমরা নয়জন বাঁশ আর ফ্লোট ধরে বেঁচে ছিলাম, কিন্তু অনেকে জ্ঞান হারিয়েছিলেন। সোমবার রাতে একটি ট্রলারের আলো দেখে আমরা শেষ বয়া এলাকায় পৌঁছাই, এবং তারা আমাদের উদ্ধার করে।”
ট্রলারটির দৈর্ঘ্য ছিল আনুমানিক ৪৫ ফুট, এবং এতে জাল টানার জন্য ‘আর্ণি’ যন্ত্র সংযুক্ত ছিল। ট্রলারটির রং ছিল নীল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একই সময়ে ছয়টি ট্রলার গভীর সমুদ্রে গিয়েছিল, যার মধ্যে পাঁচটি ফিরে এলেও এফবি সাগরকন্যা ফিরতে পারেনি।
নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে কোস্টগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে শোক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।