মার্কিন-চীন ব্যবসায়ী পরিষদ (US-China Business Council) এর একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এই সপ্তাহে চীনে সফর করবে, যেখানে তারা চীনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট (SCMP)-এর বরাতে রয়টার্স এই সংবাদ জানিয়েছে। এই সফরটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া সাম্প্রতিক শুল্কযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ-পর্যায়ের মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সফর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ফেডএক্স-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পরিষদের বোর্ড চেয়ার রাজেশ সুব্রামানিয়াম এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
প্রতিনিধি দলে বোয়িং-এর নির্বাহী কর্মকর্তারা এবং পরিষদের প্রেসিডেন্ট শন স্টেইন সহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। সফরে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী নেতাদের পূর্ণ তালিকা বা বিস্তারিত সময়সূচি প্রকাশ করা হয়নি।
প্রতিনিধি দলটি চীনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবে, সম্ভবত ব্যবসায়িক আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে। একটি সূত্র জানিয়েছে, “তারা চীনা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যাতে ব্যবসায়িক আলোচনা পুনরায় শুরু করা যায়।”
এই সফর মার্কিন-চীন বাণিজ্য আলোচনার সর্বশেষ রাউন্ডের সাথে মিলে যাচ্ছে, যা দুই দেশের মধ্যে চলমান শুল্কযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এপ্রিল ২০২৫ থেকে চীনা পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ শুরু করেন, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। চীনও পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যার মধ্যে কিছু পণ্যের উপর শুল্ক ১০০% ছাড়িয়েছে।
ইউএস-চায়না বিজনেস কাউন্সিল নিয়মিতভাবে চীনে সফরের আয়োজন করে, যা প্রায়শই গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টের সাথে মিলে যায়। গত বছরের সফর বেইজিংয়ে একটি বড় নীতি বৈঠকের সময় হয়েছিল, যেখানে অ্যাপল, বোয়িং, গোল্ডম্যান স্যাক্স এবং মাইক্রন টেকনোলজির জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা অংশ নিয়েছিলেন।
এই সফরটি মার্কিন-চীন বাণিজ্য আলোচনার একটি সিরিজের অংশ, যেখানে মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক এবং চীনের ভাইস-প্রিমিয়ার হি লিফেং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। জুন ২০২৫-এ জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় উভয় পক্ষ একটি “কাঠামোতে নীতিগতভাবে” সম্মত হয়েছিল, যা ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এই সফরটি মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য চীনের বাজারে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার এবং চলমান শুল্কযুদ্ধের প্রভাব কমানোর একটি সুযোগ। বোয়িং-এর মতো কোম্পানি, যারা চীনের বিমান চলাচলের বাজারের উপর নির্ভরশীল, এই আলোচনা থেকে উপকৃত হতে পারে।
এই সফরটি মার্কিন-চীন সম্পর্কের একটি সংকটপূর্ণ সময়ে হচ্ছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন চীনের উপর উচ্চ শুল্ক বজায় রাখার এবং মিত্র দেশগুলোর উপরও শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ট্রাম্প এবং শি অক্টোবর-নভেম্বরে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা (APEC) শীর্ষ সম্মেলনের আগে বা সময়ে মিলিত হতে পারেন, যা বাণিজ্য উত্তেজনা কমানোর সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
চীনের ভাইস-প্রিমিয়ার হি লিফেং মে ২০২৫-এ বলেছিলেন, চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পার্থক্য নিয়ন্ত্রণ করতে এবং “সহযোগিতার পাই বড় করতে” প্রস্তুত। এই সফরটি এই প্রতিশ্রুতির একটি পরীক্ষা হতে পারে।
মার্কিন শুল্ক চীনা পণ্যের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেছে, যখন চীনের পাল্টা শুল্ক মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য বাজার প্রবেশকে জটিল করেছে। এক্স-এ পোস্টগুলোতে কিছু ব্যবহারকারী এই সফরকে শুল্কযুদ্ধের মধ্যে “আশার আলো” হিসেবে দেখলেও, অন্যরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে এটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনতে পারবে কিনা।
ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর বাণিজ্য নীতি এবং চীনের প্রতি সন্দেহজনক দৃষ্টিভঙ্গি এই আলোচনার জন্য একটি জটিল পটভূমি তৈরি করেছে। মার্কিন ব্যবসায়ী নেতারা চীনের বাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করলেও, তারা ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সমালোচনা এড়িয়ে চলতে পারে।
পূর্ববর্তী বাণিজ্য আলোচনায় ব্যর্থতা এবং চীনের বিরুদ্ধে প্রযুক্তি চুরি ও বাজার বাধার অভিযোগের কারণে মার্কিন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে সতর্কতা রয়েছে।
মার্কিন-চীন ব্যবসায়ী পরিষদের এই সফর মার্কিন-চীন বাণিজ্য সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। চলমান শুল্কযুদ্ধ এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে, এই আলোচনা উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন পথ খোলার সম্ভাবনা বহন করে। তবে, সফরের সাফল্য নির্ভর করবে চীনা কর্মকর্তাদের সাথে অর্থবহ আলোচনা এবং ট্রাম্প ও শি-এর মধ্যে সম্ভাব্য শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফলের উপর।