তেলের দাম শুক্রবার (২৫ জুলাই, ২০২৫) বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির আশাবাদ এবং রাশিয়ার গ্যাসোলিন রপ্তানি সীমিত করার পরিকল্পনার খবরের কারণে। এই ঘটনাগুলো বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা যোগ করেছে, যদিও ভেনেজুয়েলায় শেভরনের উৎপাদন পুনরায় শুরুর খবর তেলের দামের উপর নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি।
ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার ০০২৭ জিএমটি-তে ১৭ সেন্ট বা ০.৩% বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৬৯.৩৫ ডলারে পৌঁছেছে। ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড ফিউচার ১৫ সেন্ট বা ০.২% বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৬৬.১৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার তেলের দাম ১% বেড়েছিল, যা রাশিয়ার গ্যাসোলিন রপ্তানি হ্রাসের প্রত্যাশা এবং মার্কিন-ইইউ বাণিজ্য আলোচনার আশাবাদের কারণে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তেল মজুদ গত সপ্তাহে ৩.২ মিলিয়ন ব্যারেল কমে ৪১৯ মিলিয়ন ব্যারেলে নেমেছে, যা রয়টার্সের জরিপে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশিত ১.৬ মিলিয়ন ব্যারেল হ্রাসের তুলনায় দ্বিগুণ। এই হ্রাস তেলের দাম বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
দুই ইউরোপীয় কূটনীতিক জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ একটি বাণিজ্য চুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা ইইউ আমদানির উপর ১৫% বেসলাইন শুল্ক এবং সম্ভাব্য ছাড় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এই সম্ভাবনা জাপানের সঙ্গে সাম্প্রতিক চুক্তির পর আরেকটি বড় বাণিজ্য চুক্তির পথ প্রশস্ত করতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির উপর চাপ কমাবে। এই আশাবাদ তেলের চাহিদা বৃদ্ধির প্রত্যাশাকে উৎসাহিত করেছে, যা বাজারকে সমর্থন করছে।
মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাশিয়া বেশিরভাগ দেশে গ্যাসোলিন রপ্তানি সীমিত করার পরিকল্পনা করছে, যা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টি করতে পারে। ইইউ তার ১৮তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের মূল্যসীমা ৬০ ডলার থেকে কমিয়ে ৪৭.৬০ ডলারে নির্ধারণ করেছে, যা রাশিয়ার তেল রপ্তানি আয় কমাতে এবং ইউক্রেনে যুদ্ধের অর্থায়ন সীমিত করতে লক্ষ্য করছে। এছাড়া, জানুয়ারিতে রাশিয়ার সমুদ্রপথে অপরিশোধিত তেল রপ্তানির ৮৪% ‘শ্যাডো’ ট্যাঙ্কার দ্বারা পরিবহন করা হয়েছে, যা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ব্যবহৃত হয়।
শেভরন কর্পোরেশনের ভেনেজুয়েলায় উৎপাদন পুনরায় শুরুর সম্ভাবনা, যা দৈনিক ২০০,০০০ ব্যারেল তেল বিশ্ব বাজারে যোগ করতে পারে, তেলের দামের উপর নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ওপেক দেশে সীমিত তেল কার্যক্রমের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে।
আইজি-র বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, “এই সপ্তাহে তেলের দাম ৬৫/৬৪ ডলার সমর্থন ব্যান্ড থেকে ঘুরে দাঁড়ানো আমাকে উৎসাহিত করেছে, যা ৭০ ডলারের দিকে পুনরুদ্ধারের আশা বজায় রাখে।” আগামী সপ্তাহে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতি এবং বৃহত্তম তেল গ্রাহক—চীন থেকে কারখানার কার্যকলাপ তথ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি, চাকরি এবং মজুদ তথ্যের মতো মূল সূচকগুলোর উপর বিনিয়োগকারীদের নজর থাকবে। রাশিয়ার উপর সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, যেমন ট্রাম্পের ৫০ দিনের মধ্যে শান্তি চুক্তিতে না পৌঁছালে রাশিয়ার তেল ক্রয়কারী দেশগুলোর উপর ১০০% সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞার হুমকি, বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহকে আরও সংকুচিত করতে পারে।
জাপানের বাজার রাশিয়ার গ্যাসোলিন রপ্তানি সীমাবদ্ধতার খবরে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি মূল্যের অস্থিরতা বাড়িয়েছে। জাপানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বাণিজ্য চুক্তি, যা অটো আমদানির উপর শুল্ক ২৫% থেকে কমিয়ে ১৫% করেছে, তেলের চাহিদা বৃদ্ধির আশাবাদকে আরও শক্তিশালী করেছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনার অগ্রগতির অভাব এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্য আলোচনার অনিশ্চয়তা তেলের দামের বৃদ্ধিকে সীমিত করছে। ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা, যার মধ্যে রাশিয়ার তেলের মূল্যসীমা কমানো এবং ১০৫টি জাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ অন্তর্ভুক্ত, রাশিয়ার তেল রপ্তানি আয় কমাতে লক্ষ্য করছে। এছাড়া, রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরের প্রধান বন্দরগুলোতে বিদেশি তেল ট্যাঙ্কারের লোডিং সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা কাজাখস্তানের রপ্তানিতেও প্রভাব ফেলেছে।
তেলের দামের বৃদ্ধি মার্কিন-ইইউ বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি, মার্কিন তেল মজুদে উল্লেখযোগ্য হ্রাস, এবং রাশিয়ার গ্যাসোলিন রপ্তানি সীমাবদ্ধতার প্রত্যাশার ফলাফল। তবে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্য সম্পর্কের অনিশ্চয়তা, বাজারের অস্থিরতা বাড়াতে পারে। বিনিয়োগকারীরা আগামী সপ্তাহে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক তথ্যের উপর নজর রাখবেন, যা তেলের দামের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।