ইসরায়েল-গাজা সংঘর্ষে নতুন করে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই গাজার মানবিক সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বান সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির কোনো অগ্রগতি নেই।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় চলমান মানবিক সংকট মোকাবিলায় আরও খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। কারণ সহায়তা বহনকারী ট্রাকগুলো লুটপাটের শিকার হওয়ায় খাদ্য বিতরণ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যেই গাজায় সাহায্যবাহী ট্রাকগুলো লুটের হাত থেকে রক্ষাকারীদের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার ইসরায়েল দাবি করে, ‘গাজায় কোনো খাদ্যসংকট নেই’। যদিও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় ওই একই সপ্তাহে বলেছিল, ‘মানবিক সংকট ঠেকাতে ইসরায়েল গাজায় একটি ন্যূনতম মাত্রায় খাদ্য সরবরাহ করছে তারা’।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার গাজা যুদ্ধ অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ও মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। রবিবার থেকে একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সাময়িক অবসান হতে পারে। তবে চুক্তিটি এখনও ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষা রয়েছে। যুদ্ধের তীব্রতা গাজার ঘনবসতিপূর্ণ নগর এলাকাকে সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।
গাজায় তীব্র মানবিক সংকট নিরসনে পদক্ষেপ না নিলে ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। শুক্রবার সিঙ্গাপুর সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়াংয়ের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মানবিক অবরোধ একটি যুদ্ধাপরাধ। ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইসরায়েলের তিন মাসব্যাপী অবরোধে গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে, প্রতি পাঁচজনের একজন চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা-ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ‘গাজায় যা চলছে তা একটি মানবিক বিপর্যয়। এখন যে পরিমাণ সহায়তা ঢুকছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। ভুসির গাদায় সুচ খোঁজার মতো’।
গত ২ মার্চ থেকে আরোপিত পূর্ণ অবরোধের পর এই সপ্তাহে প্রথমবারের মতো খাদ্য ও মানবিক সহায়তা বহনকারী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে দেয় ইসরায়েল। তাদের দাবি, সোমবার থেকে ৩০০টিরও বেশি সহায়তাবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।
ইসরায়েল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গাজায় সামান্য পরিমাণ খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশের অনুমতি দিলেও, বাস্তব পরিস্থিতি অবনতির দিকেই যাচ্ছে। একাধিক সহায়তা কেন্দ্র সহিংসতার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার গাজার মধ্যাঞ্চলে সহায়তা নিতে আসা লোকজনের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালালে বেশ কয়েকজন আহত হন।
গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের সামরিক হামলায় কমপক্ষে ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সোমবার (১৮ নভেম্বর) চালানো হামলায় ৬ জন নিহত হয়েছেন বাস্তুচ্যুত পরিবারদের জন্য স্থাপিত ত্রাণ শিবিরেও হামলা হয়েছে। চিকিৎসাকর্মীরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার ১৯ মাস পর গাজায় পরিস্থিতি এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। শুক্রবার (৩০ মে) জাএক বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ‘যদিও গাজায় সীমিত সাহায্য সরবরাহ আবার শুরু হয়েছে। তবুও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা রয়ে গেছে’।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) প্রধান মিরিয়ানা স্পলিয়ারিচ গাজাকে ‘পৃথিবীর নরক থেকেও ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন।