চামড়া শিল্প নিয়ে কোরবানির মৌসুমে সরকারের উদ্যোগ এবং সারাদেশব্যাপী চামড়া সংরক্ষণের চিত্র এবার ছিল সুসংগঠিত ও পরিকল্পিত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের কোরবানিতে ঢাকাসহ ছয়টি বিভাগে মোট ২৫ লাখ ২৬ হাজার ২৩৩টি গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার পোস্তা ও সাভার বিসিক চামড়া শিল্পনগরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৬টি চামড়া। বাকি ২০ লাখ ৫৯ হাজার ৯৩৭টি চামড়া দেশের ছয়টি বিভাগ—চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও খুলনার বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সংরক্ষণ করা হয়েছে।
চামড়া সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয়তা দেখা গেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। বিভাগের ১১টি জেলার মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংগুলোতে ৭ লাখ ৭৪ হাজার ৭৫৬টি চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম জেলাতেই চামড়া সংরক্ষিত হয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ১০০টি, যা জাতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ। কুমিল্লায় ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৮৫টি, এবং নোয়াখালীতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৩১টি চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা বিভাগটির সামগ্রিক সংখ্যাকে প্রভাবিত করেছে।
রাজশাহী বিভাগে ৮ জেলার এতিমখানা ও মাদরাসায় সংরক্ষণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৪টি চামড়া। এর মধ্যে গরু ও মহিষের চামড়া ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৯০৫টি, আর ছাগলের ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬১৯টি। রাজশাহী জেলা এককভাবে ৬৭ হাজার ২৪৭টি চামড়া সংরক্ষণের মাধ্যমে বিভাগে শীর্ষস্থানে রয়েছে।
সিলেট বিভাগের চিত্রও ছিল উল্লেখযোগ্য। চারটি জেলায় মোট ২ লাখ ৯ হাজার ৩৪৫টি চামড়া সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিশেষ করে সিলেট জেলা একাই সংরক্ষণ করেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৩৫০টি চামড়া। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জেও ভালো পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ হয়।
বরিশাল বিভাগে ৬ জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫১৮টি চামড়া। বরিশাল জেলা এখানে সবচেয়ে এগিয়ে, ৬১ হাজার ২৮৮টি চামড়া সংরক্ষণের মাধ্যমে।
রংপুর বিভাগে সংরক্ষিত চামড়ার সংখ্যা ২ লাখ ৮১ হাজার। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলা এই বিভাগে বড় ভূমিকা রেখেছে। গাইবান্ধা জেলাতেই সংরক্ষিত হয়েছে ৫৮ হাজার ৫০০টি চামড়া, যা বিভাগটির মধ্যে সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে খুলনা বিভাগে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৪টি চামড়া। এই বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে ঝিনাইদহে সবচেয়ে বেশি ৯৩ হাজার ৭৩৬টি চামড়া সংরক্ষিত হয়েছে। এছাড়া যশোর, কুষ্টিয়া ও নড়াইল থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চামড়া সংগ্রহ হয়েছে।
এ বছর কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল বিনামূল্যে ৩০ হাজার মেট্রিক টন লবণ সরবরাহ। এ লবণ সরবরাহের ফলে দেশের বিভিন্ন মাদরাসা, মসজিদ ও এতিমখানা স্থানীয়ভাবে দুই থেকে তিন মাস চামড়া সংরক্ষণের সুযোগ পেয়েছে। ময়মনসিংহ ব্যতীত দেশের সব বিভাগের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ হয়েছে এবং নিয়মিতভাবে তথ্য পাঠানো হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুমে।
সামগ্রিকভাবে এবার চামড়া সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটি ছিল তুলনামূলকভাবে সুসংগঠিত। সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সমন্বিত উদ্যোগে এতিম ও দরিদ্রদের হক আদায় যেমন নিশ্চিত করা গেছে, তেমনি চামড়া শিল্পকে ক্ষতির হাত থেকেও রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। চামড়া সংগ্রহে অব্যবস্থাপনার যে অভিযোগ পূর্ববর্তী বছরগুলোতে ছিল, এ বছর তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল বলেই মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।