ঈদুল আজহার দিন শনিবার রাতে ‘শতভাগ কোরবানির বর্জ্য অপসারণ’ সম্পন্ন করার দাবি করেছিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বার্তায় জানানো হয়েছিল, উত্তর সিটি করপোরেশনে ১০ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী সাড়ে আট ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে ৯ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করেছেন। অন্যদিকে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দাবি করে, তারা ১২ ঘণ্টার আগেই ৭৫টি ওয়ার্ড থেকে ১২ হাজার টনের বেশি কোরবানির বর্জ্য সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ঈদের পরদিন ভোরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এক ভিন্ন চিত্র।
রবিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে আগারগাঁওয়ের ৬০ ফুট সড়কে গেলে দেখা যায়, সড়কের এক পাশ জুড়ে জমে আছে কোরবানির পশুর বর্জ্য। স্থানটি থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে উত্তর সিটি করপোরেশনের আনুষ্ঠানিক বর্জ্য অপসারণ শুরুর স্থান—বিজ্ঞান জাদুঘরের পাশে অবস্থিত পরিসংখ্যান সড়ক। অথচ তার কাছাকাছি এলাকাতেই দেখা গেল অব্যবস্থাপনার স্পষ্ট নমুনা।
শুধু আগারগাঁও নয়, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, মধ্য পীরেরবাগ, পশ্চিম আগারগাঁও, মধ্যমণিপুর, কালশী, বেনারসিপল্লি, ধানমন্ডি, কলাবাগান, আজিমপুর এবং হাজারীবাগ—প্রায় প্রতিটি এলাকায় একই অবস্থা। সড়কের পাশে, অলিগলিতে, এমনকি করপোরেশনের নির্ধারিত বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রগুলোতেও জমে আছে পচা বর্জ্য। কোথাও কনটেইনার উপচে পড়েছে, কোথাও খোলা রাস্তায় গরুর ভুঁড়ি বা হাড়ের স্তূপ পড়ে আছে। বর্জ্যের পচন থেকে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ, উড়ে বেড়াচ্ছে মাছি, নাক চেপে চলতে হচ্ছে পথচারীদের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে বর্জ্য অপসারণের গাড়ি আর আসেনি। বাসা থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য জমিয়ে রাখা হয়েছে অলিগলির ভেতরে, কিন্তু সেগুলো আর আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে পৌঁছায়নি। কলাবাগান শিশুপার্ক–সংলগ্ন এসটিএস, যেখানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল, সেখানেও ঈদের পরদিন সকাল পর্যন্ত রয়ে গেছে বর্জ্যের স্তূপ। কর্মীদের কাউকেই দেখা যায়নি, বরং ভাঙারি সংগ্রহকারী এক ব্যক্তি জানান, ভোররাত পর্যন্ত কিছু কর্মী কাজ করলেও পরে ক্লান্ত হয়ে চলে যান।
ধানমন্ডি ৮ নম্বর, আজিমপুর গোরস্থানসংলগ্ন রাস্তা, মনেশ্বর সড়কসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। কোথাও গরুর পেটের নাড়িভুঁড়ি পড়ে আছে, কোথাও জমে আছে হাড় ও চামড়ার অংশ। এই চিত্র নগরবাসীকে যেমন হতাশ করেছে, তেমনি সিটি করপোরেশনের ঘোষণার বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
করপোরেশনের ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবের এই বিস্তর ফারাক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিকেরা। অনেকেই বলেছেন, সিটি করপোরেশনের ঘোষণাগুলো কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। মাঠপর্যায়ে কাজের কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না।
পবিত্র ঈদুল আজহার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে যেখানে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা জরুরি, সেখানে এমন অব্যবস্থা জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশ—উভয়ের জন্যই হুমকি। সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না হলে তা শুধু দুর্গন্ধ বা দৃষ্টিকটুই নয়, বরং মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্ম দিতে পারে। এ অবস্থায় কেবল কাগজে-কলমে শতভাগ সফলতার ঘোষণা নয়, মাঠপর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থাপনার প্রমাণ দিতে হবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে। অন্যথায় প্রতি ঈদেই এমন চিত্রই যেন পরিণত হচ্ছে ‘নতুন স্বাভাবিক’-এ।