ঈদ মানেই আনন্দ, খুশি আর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। কিন্তু উপকূলীয় পটুয়াখালীতে ঈদের সেই চেনা ছবি একেবারেই আলাদা। ঈদের দিনেও বহু ছিন্নমূল পরিবার, বিশেষ করে নদীভিত্তিক মান্তা সম্প্রদায়, মাছ আর আলু ভর্তা দিয়েই দিন কাটিয়েছেন। কারও ঘরে কোরবানি হয়নি, আবার কেউ পারতেন না বাজার থেকে এক কেজি মাংসও কিনতে।
নদীর ওপর ছোট্ট নৌকায় বসবাস করেন ঝুমুর বেগম। বয়স তিরিশ ছুঁই ছুঁই হলেও মুখের রেখা যেন বলে দেয় কঠিন বাস্তবতার কথা। স্বামী ও চার সন্তান নিয়ে তার সংসার চলে নদীভিত্তিক জীবিকায়। ঈদের দিন সকালে চুলায় হাঁড়ি চাপালেও তাতে নেই মাংস, নেই পোলাও। নদী থেকে ধরা ছোট মাছ আর আলু ভর্তা দিয়েই চলেছে ঈদের আয়োজন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঝুমুর বেগম বলেন,
‘আমরা গরিব মানুষ। আমাগো ঈদ নাই। কিন্তু কষ্ট লাগে পোলাপানগুলার লাইগা। ওরা জিগায়, মা, ঈদের গোস্ত কই? আমিও মুখ ফেরায়া কাঁদি।’
এমন বাস্তবতা শুধু ঝুমুর বেগমের নয়। পুরো রাঙ্গাবালী উপজেলা জুড়ে হাজারো জেলে, কৃষক, দিনমজুর ও ভাসমান পরিবার—সবার অবস্থাই প্রায় একই। ঈদের দিন অন্য দিনের চেয়ে আলাদা কিছু ছিল না তাদের জন্য।
মান্তা সম্প্রদায়ের সোহেল মাঝি বলেন,
‘ঈদের দিন আর অন্য দিনের তফাত কি? হুদা নামডা আলাদা। মাংস তো দূরের কথা, গন্ধটাও পাইনি। সকালে নদী থেইকা মাছ ধরছি, আলু ভর্তা দিয়া রান্ধছি। দুপুর খাইয়া আবার নামছি মাছ ধরতে।’
এই সম্প্রদায়ের মানুষদের নেই স্থলভাগের প্রতিবেশী, নেই ভাগাভাগির সংস্কৃতি। আশপাশে সবাই দরিদ্র। যার ঘরেই সাধ্যমতো খাবার নেই, সে আর অন্যকে কী দেবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপকূলীয় এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে টেকসই সহায়তার আওতায় না আনলে তাদের মৌলিক মানবাধিকারও অধরা থেকে যাবে। ঈদে বেসরকারি ত্রাণ কিংবা সামর্থ্যবানদের সহযোগিতা থাকলেও তা পৌঁছায় না নদীতে বসবাসকারী এই ভাসমান জনগোষ্ঠীর কাছে।
ঈদ আসে, ঈদ যায়। কিন্তু এই মানুষগুলোর কাছে ঈদ কেবল ক্যালেন্ডারের একটি তারিখ। উৎসবের আনন্দ যেন তাদের ছুঁয়েও যায় না।
নদীর ঢেউ জানে তাদের না বলা কথা—সন্তানের মুখে একটুকরো মাংস তুলে দিতে না পারার সেই নিঃশব্দ কষ্ট।