1. bulletindhaka9@gmail.com : ঢাকা বুলেটিন : ঢাকা বুলেটিন
  2. info@www.dhakabulletin.news : ঢাকা বুলেটিন :
মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এ স্বর্ণপদক অর্জনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ভোলার চর কুকরী মুকরীতে শুটকি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত পটুয়াখালীতে নানা আয়োজনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপিত জুড়ী উপজেলা বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন সভাপতি রেজা, সম্পাদক মতিউর অস্বাভাবিকভাবে শান্ত ক্রেডিট বাজারে উদ্বেগের কিছু ক্ষেত্র চীনের ইস্পাত রপ্তানি বৃদ্ধির মুখে জাপানের ইস্পাত শিল্প শুল্ক ফাঁকি রোধে সংস্কার দাবি করছে  গুগল অস্ট্রেলিয়ার টেলিকম কোম্পানিগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা-বিরোধী চুক্তির জন্য ৩৬ মিলিয়ন ডলার জরিমানায় সম্মত চীনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ঠাণ্ডা হচ্ছে: প্রবৃদ্ধি মন্দা, বাজারে চ্যালেঞ্জ ভারতের রুশ ক্রুড তেল ক্রয় বন্ধ করতে হবে: মার্কিন উপদেষ্টা নাভারো  ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক ও জ্যাকসন হোল সম্মেলনের আগে মার্কিন ডলার স্থিতিশীল

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সূর্যমুখী চাষ: কৃষি অভিযোজনের অনন্য দৃষ্টান্ত

মো: সামিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫
  • ২৬৯ বার পড়া হয়েছে

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জোয়ারের নোনা পানি ঢুকে পড়ার ফলে এই অঞ্চলের মাটি ক্রমশ লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি অনুর্বর হয়ে পড়েছে, যা কৃষকদের জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তবে কৃষির আধুনিক অভিযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। লবণসহিষ্ণু সূর্যমুখী চাষের সফলতার মাধ্যমে উপকূলীয় কৃষকরা এখন তাদের পতিত জমিকে নতুন করে চাষযোগ্য করে তুলছেন।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় এমনই এক ইতিবাচক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির উদ্যোগে ও সহায়তায় লবণসহিষ্ণু সূর্যমুখী চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী বীজ এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য আশাতীত ফলন দিচ্ছে। এই উচ্চফলনশীল জাতের সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পথও তৈরি হচ্ছে।

এক সময় এই অঞ্চলে আমন ধান কাটার পর অধিকাংশ জমি পতিত পড়ে থাকতো, কারণ লবণাক্ততার কারণে অন্যান্য শস্য চাষ করা সম্ভব হতো না। কিন্তু ব্র্যাকের এডাপটেশন ক্লিনিকের সহায়তায় কৃষকদের বীজ, সার, বালাই ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, যার ফলে তারা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হন। এর ফলস্বরূপ, এই বছর কলাপাড়ার প্রায় ৫,০০০ বিঘা পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে, যা থেকে ১,৮০০ টন সূর্যমুখী উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই উৎপাদিত সূর্যমুখী থেকে প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার লিটার তেল পাওয়া যাবে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

সূর্যমুখী বীজের তেল পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এবং এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে, ফলে এই তেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে কৃষকদের যাতে তেল উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ করতে সুবিধা হয়, সেজন্য তাদের মধ্যে সূর্যমুখীর খোসা ছাড়ানোর মেশিন এবং তেল ভাঙানোর মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকরা এখন শুধু সূর্যমুখী বীজ বিক্রিই করছেন না, বরং স্থানীয় বাজারে ২৫০ টাকা লিটার দরে তেলও বিক্রি করছেন। এই উদ্যোগ উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

লতাচাপলি ইউনিয়নের তাহরেপু এলাকার কৃষক রাবেয়া বেগম জানান, “লবণাক্ত মাটিতে এত ভালোভাবে আর কোনো ফসল ফলতে দেখিনি। প্রতি একরে প্রায় ২৭-৩০ মণ সূর্যমুখী বীজ সংগ্রহের আশা করছি। আগে যেখানে মুগ ডাল উৎপাদন করতাম, সেখানে এখন সূর্যমুখী চাষ করে পাঁচগুণ বেশি আয় করছি। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, এখন আর বাজার থেকে তেল কিনতে হয় না। গবাদি পশুর খাদ্যের জন্যও সূর্যমুখীর ডালপাতা কাজে লাগছে।”

একই এলাকার আরেক কৃষক হাশেম মুন্সি বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার কারণে এবার আমাদের ফসল ভালো হয়েছে। এটি আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি, নগর উন্নয়ন কর্মসূচি ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, “উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ও সঠিক পরামর্শের মাধ্যমে লবণাক্ত জমিতে সূর্যমুখী চাষ একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে। এটি শুধু কৃষকদের জন্য নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।”

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৪০ কোটি টাকার সূর্যমুখী তেল উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।”

উপকূলীয় অঞ্চলে লবণসহিষ্ণু সূর্যমুখী চাষ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। এটি কৃষকদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে এবং ভবিষ্যতে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট