অস্ট্রেলিয়ান সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ (এএসএক্স) আজ সোমবার তাদের কোম্পানি ঘোষণা প্ল্যাটফর্মে নতুন করে বড় ধরনের সার্ভার বিঘ্নের (outage) সম্মুখীন হয়েছে; এ ঘটনায় বাজার অবকাঠামোর স্থিতিশীলতা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্বেগ আরও গভীর হলো।
এএসএক্স জানায়, সকাল ১০:৪৫টা (স্থানীয় সময়) থেকে তাদের ‘কোম্পানি ঘোষণা প্ল্যাটফর্ম’ (Announcements Platform) অ্যাক্সেস করা যায়নি। এ প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য বাধ্যতামূলক তথ্য প্রকাশ করে। বিঘ্নের সময় কোনো কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ মূল্য সংবেদনশীল ঘোষণা প্রকাশ হয়েছে কি-না তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি এএসএক্স। পূর্ণ সেবা পুনরায় চালু হতে কয়েক ঘণ্টা লাগে।
এই দুর্ঘটনা এএসএক্সের জন্য নতুন মাথাব্যথা, যাদের ওপর ইতোমধ্যেই ২০২০-২৫ সময়কালে একাধিক বড় প্রযুক্তি ব্যর্থতা ও নিয়ন্ত্রক তদন্ত চলছে। নিচে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রধান ঘটনাবলির সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো:
- জুন ২০২৫ — অস্ট্রেলিয়ান সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস কমিশন (এএসআইসি) ঘোষণা করে, তারা এএসএক্সের গভর্ন্যান্স, প্রযুক্তি-বিনিয়োগ ও বাজার অবকাঠামো সরবরাহ ক্ষমতার ওপর ‘ব্যাপক তদন্ত’ শুরু করেছে।
- ডিসেম্বর ২০২৪ — ক্লিয়ারিং হাউস ইলেকট্রনিক সাব-রেজিস্টার সিস্টেম (সিএইচইএসএস) সপ্তাহব্যাপী বিকল থাকে; লেনদেন নিষ্পত্তি বিলম্বিত হয় এবং বাজার অবিচ্ছিন্ন সেবা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
- আগস্ট ২০২৪ — এএসআইসি এএসএক্সের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে, অভিযোগ এনে বলে এএসএক্স ‘সিএইচইএসএস প্রতিস্থাপন প্রকল্প সঠিক পথে আছে’ বলে বিবৃতি দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছে। ২০১৫ সাল থেকে তিন দশক পুরনো প্ল্যাটফর্মটি বদলাতে গিয়ে প্রকল্পটি দু’বার সময়সীমা পার করে।
- মার্চ ২০২৪ — এএসএক্সকে ৮ হাজারের বেশি লেনদেনের প্রাক-ট্রেড তথ্য প্রকাশ না করায় ১.১ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা করে এএসআইসি।
- মার্চ ২০২২ — ‘হার্ডওয়্যার-সম্পর্কিত সমস্যা’ দেখা দিলে এএসএক্স২৪ ফিউচার্স ও অপশন প্ল্যাটফর্মে কয়েক ঘণ্টা লেনদেন বন্ধ থাকে।
- নভেম্বর ২০২০ — নাসদাক-সরবরাহকৃত সফটওয়্যার ত্রুটির কারণে সকল ইকুইটি ট্রেডিং বন্ধ হয়; সংসদীয় কমিটির শুনানি হয়।
- সেপ্টেম্বর ২০১৬ — হার্ডওয়্যার বিকল থাকায় সকালে পূর্ণাঙ্গ লেনদেন শুরু করা যায়নি; ১,২২১ টি ট্রেড ও ৩,০৬২ টি লেনদেন বাতিল করা হয়।
এএসএক্সের এক মুখপাত্র আজ জানান, ‘আমরা সার্ভার বিঘ্নের কারণ অনুসন্ধান করছি এবং স্টেকহোল্ডারদের যথাসময়ে জানাব।’ এএসআইসি বলেছে, তারা ঘটনার বিবরণ চেয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ক্রমাগত প্রযুক্তি ব্যর্থতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে এবং নিয়ন্ত্রকদের কঠোরতা বাড়িয়ে তুলছে। সিডনি-ভিত্তিক ব্রোকারেজ ফার্ম বেল মোরগান-এর প্রধান কৌশলবিদ নিক টুইট বলেন, ‘এক্সচেঞ্জের মূল কাজই হলো নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম দেওয়া; প্রতিটি বিঘ্ন সেই মৌলিক চুক্তিকে নড়বড়ে করে দেয়।’
এএসএক্স জানায়, তারা ক্লাউড-ভিত্তিক নতুন ঘোষণা প্ল্যাটফর্মে মাইগ্রেশনের পরিকল্পনা করছে; তবে এর আগে চলমান সিস্টেমের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই তাদের অগ্রাধিকার।
উপসংহার:
আজকের বিঘ্নটি যদিও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে তা এএসএক্সের প্রযুক্তি-সংস্কার প্রক্রিয়া ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার আস্থা পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে বাজার অবকাঠামোর দায়িত্বে থাকা এএসএক্সের পক্ষ থেকে কার্যকর ও স্বচ্ছ সংস্কারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক জরিমানা অনিবার্য বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।