ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সামনে গড়ে উঠেছে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সচালক ও মালিকদের এক সিন্ডিকেট। সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স থাকা সত্ত্বেও রোগীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার দিনমজুর কবির হোসেন কয়েক দিন আগে বার্ধক্যজনিত কারণে মাকে ভোলা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন। গত বুধবার চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তিনি মাকে বাড়ি নিতে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চালকের সঙ্গে কথা বলেন। চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চালক জসিম উদ্দিন প্রথমে ২৪০০ টাকা চাইলেও পরে দুই হাজার টাকায় রাজি হন। কিন্তু হাসপাতালের সামনে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সচালকরা তাকে বাধা দেয়। ফলে তিনি রোগী না নিয়েই ফিরে যান।
কবির হোসেন বলেন, “সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে কথা পাকা হয়েছিল, কিন্তু নিচে এসে জানানো হয় যাওয়া যাবে না। পরে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুল্যান্সে করে মাকে নিয়ে যাই।”
সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সচালক জসিম উদ্দিনও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সচালকরা আমাকে ডেকে নিয়ে বলেন, তারা ওই ভাড়ায় যাবে। তাই আমি আর কথা বাড়াইনি।”
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ২০টিরও বেশি বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে সরকারি তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স কার্যত নিষ্ক্রিয়। অভিযোগ রয়েছে, এ সিন্ডিকেট রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে এবং বাইরের কোনো অ্যাম্বুল্যান্সকে রোগী নিতে দিচ্ছে না।
ভুক্তভোগী কামরুল ইসলাম জানান, “আমার আত্মীয়কে বরিশাল নিতে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজে পাইনি। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সচালকরা বলল চালক নেই। শেষে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যেতে হয়েছে।”
আরেক রোগীর স্বজন মো. আলমগীর বলেন, “ঢাকা যেতে ১২ হাজার টাকায় রাজি ছিল অন্য উপজেলার অ্যাম্বুল্যান্স, কিন্তু এখানকার সিন্ডিকেট বাধা দেয়। শেষ পর্যন্ত ১৭ হাজার টাকা দিতে হয়।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স সাধারণ রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হয় না। নির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা না থাকায় যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো টাকা নেওয়া হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে ভোলা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স মালিক সমিতির সভাপতি মো. মিলন হাওলাদার বলেন, “অন্য উপজেলাগুলোতেও একই নিয়ম চলে। তারা আমাদের এলাকা থেকে রোগী নিতে দেয় না, আমরাও দিই না। তবে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের কাজে আমরা বাধা দিই না।”
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ আবু সুফিয়ান রুস্তম বলেন, “হাসপাতালের ভেতর গেইট স্থাপন করে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের দৌরাত্ম্য কমাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনিক সহায়তা পাইনি। এখন তারা সিন্ডিকেট করে রোগীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, এমনকি চিকিৎসকদেরও মারধর করে।”
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনো এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিতভাবে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”