বসনিয়ান সার্ব জাতীয়তাবাদী নেতা মিলোরাদ ডোডিক ও তাঁর সহযোগীদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০১৭ সাল থেকে ‘ডেটন শান্তিচুক্তি’ লঙ্ঘনের অভিযোগে ডোডিক ও তাঁর পরিবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের অধীনস্থ ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল অফিস (ওএফএসি) বুধবার ঘোষণা করেছে, বসনিয়ান সার্ব নেতা মিলোরাদ ডোডিক, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, ব্যবসায়ী এবং ডোডিকের ছেলে ও মেয়ে।
ওএফএসি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দিষ্ট কারণ জানায়নি। তবে বসনিয়ার সার্ব প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে তারা নীরবে কাজ করে যাচ্ছিলেন, যদিও রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও বজায় রেখেছেন।
ডোডিক, যিনি বসনিয়ার স্বায়ত্তশাসিত সার্ব রিপাবলিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট, গত আগস্টে আদালতের রায়ে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ হন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সার্ব রিপাবলিকার স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং ডেটন চুক্তির বিরোধিতা করায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিলেন।
এক্স (পূর্বের টুইটার) প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা এক বার্তায় ডোডিক বলেন, “রেপুবলিকা সার্পস্কা ও তার প্রতিনিধিদের ওপর আরোপিত অন্যায় দূর করায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীদের ধন্যবাদ জানাই।” তিনি আরও বলেন, “এই সিদ্ধান্ত শুধু আইনি নয়, নৈতিকভাবেও রেপুবলিকা সার্পস্কার মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।”
গত ১৮ অক্টোবর বসনিয়ান সার্ব সংসদ একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেয়, যা ডোডিকের রাজনৈতিক পদ থেকে সরে যাওয়াকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। নভেম্বরের ২৩ তারিখে আগাম নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন বলে জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে সংসদ গত বছর গৃহীত কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আইনও বাতিল করেছে, যা ডোডিকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক শান্তি দূতের আদেশ অমান্যের অভিযোগে মামলা দায়েরের পর পাস হয়েছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে জানায়, এটি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সংকট প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টার ফল। পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, “সার্ব রিপাবলিকের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো বসনিয়ার স্থিতিশীলতা বাড়াবে এবং পারস্পরিক স্বার্থ ও সমৃদ্ধির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বের পথ খুলে দেবে।”
মোট ৪৮ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জে ট্রুজডেল বলেন, “ডোডিকের আদালতের রায় মান্য করা ইঙ্গিত দেয় যে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখার চেষ্টা করছেন।” তিনি যোগ করেন, “ডোডিক আপাতত ডেটন চুক্তির বিরোধিতা থেকে সরে এলেও ভবিষ্যতে পুনরায় বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থান নিতে পারেন।”
বর্তমানে ডোডিক রাষ্ট্র আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংবিধান আদালতে আপিল করেছেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে পদচ্যুত, তিনি এখনো নিজেকে প্রেসিডেন্ট পরিচয়ে প্রকাশ্যে কাজ করছেন ও বিদেশ সফর করছেন।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বসনিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় খুলে দিতে পারে। তবে ডোডিকের অতীত অবস্থান ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভবিষ্যতে পশ্চিমা জোটের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষাকে কঠিন করে তুলতে পারে।