মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানো এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের আশায় বৃহস্পতিবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। অপরদিকে, ব্যাংক অব জাপান (বিওজে) সুদহার অপরিবর্তিত রাখায় ইয়েনের মান কিছুটা দুর্বল হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে এমএসসিআই-এর এশিয়া-প্যাসিফিক সূচক (জাপান বাদে) ০.৪ শতাংশ বেড়েছে। ওয়াল স্ট্রিটে টানা চার দিনের উত্থানের পর আগের দিন সামান্য পতন হলেও, ফিউচার মার্কেটে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.৪ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ বুধবার প্রত্যাশিতভাবেই ০.২৫ শতাংশ পয়েন্ট সুদহার কমিয়েছে। তবে ফেডের বিবৃতিতে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে অর্থনৈতিক তথ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ফেড চেয়ার জেরোম পাওয়েল বলেন, “যদি চাকরি ও মুদ্রাস্ফীতির তথ্য পাওয়া না যায়, তবে নীতিনির্ধারকেরা আরও সতর্ক অবস্থান নেবেন।”
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডিসেম্বর মাসে ফেডের আরেক দফা সুদহার কমানোর সম্ভাবনা কমে ৬৭.৮ শতাংশে নেমেছে, যেখানে একদিন আগেও সেই সম্ভাবনা ছিল ৯০ শতাংশের বেশি। ১০-বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ফলন তিন সপ্তাহের সর্বোচ্চ ৪.০৬৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
ব্যাংক অব জাপান (বিওজে) বুধবার ৭-২ ভোটে সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধান সূচক নিক্কেই ২২৫ ওঠানামা করলেও সর্বশেষ ০.২ শতাংশ বেড়েছে। বিওজে গভর্নর কাজুও উয়েদা বলেন, অর্থনীতি প্রত্যাশিত গতিতে এগোলে ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে সুদহার বাড়ানো হতে পারে। এ ঘোষণার পর ইয়েনের মান ডলারের বিপরীতে ০.২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫৩.০৬৫ ইয়েনে।
এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের বৈঠক আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে। মার্কিন ও চীনা আলোচকরা বাণিজ্য যুদ্ধ প্রশমনের লক্ষ্যে “অস্থায়ী সমঝোতা” পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে, যদিও দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক মতবিরোধ রয়ে গেছে।
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) বৃহস্পতিবার নীতিনির্ধারণী বৈঠকে তৃতীয়বারের মতো সুদহার অপরিবর্তিত রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোর মান সামান্য ০.১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.১৬১৩ ডলারে।
অন্যদিকে, ডলার সূচক ছয়টি প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ০.১ শতাংশ কমে ৯৯.০৯ পয়েন্টে রয়েছে, আর সোনার দাম সামান্য ০.১ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে ৩,৯৩২.০৮ ডলারে লেনদেন হচ্ছে।
ফেডের সুদহার হ্রাস ও ট্রাম্প-শি বৈঠকের অগ্রগতির আশায় এশিয়ান বাজারে স্বল্পমেয়াদি আশাবাদ দেখা গেলেও, বিশ্ব অর্থনীতির মূল অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে। ডিসেম্বর মাসে ফেড, বিওজে এবং ইসিবি—এই তিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তই আসন্ন ত্রৈমাসিকের বাজার প্রবণতা নির্ধারণ করবে।