ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গত আগস্টে ভারতীয় পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০% করার পর রপ্তানিকারকরা বড় ধাক্কা সামলাতে নতুন বাজার খুঁজছেন। শিল্পপতিদের ভাষ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ক্রেতা খোঁজার পাশাপাশি বিদায়ী মার্কিন ক্রেতাদের ধরে রাখতে ছাড় দেওয়া হচ্ছে; একই সঙ্গে দ্রুত ইইউ-ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) সইয়ের আশায় আলোচনা ত্বরান্বিত হয়েছে।
মুম্বইভিত্তিক এক পোশাক রপ্তানিকারক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, চলতি মরসুমের চুক্তিতে ইউরোপীয় ক্রেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ইইউ-ভারত এফটিএ-র খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে; উভয় পক্ষ বছরের মধ্যে সই করতে চায়। ইইউ বর্তমানে পণ্যসামগ্রীতে ভারতের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার—২০২৩-২৪ অর্থবছরে দ্বিপাক্ষিক পণ্য বাণিজ্য ১৩৭.৫ বিলিয়ন ডলার, গত দশকে প্রায় ৯০% বেড়েছে।
ইইউ-র রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ (REACH), টেকসই সোর্সিং ও লেবেলিং বিধি মানাতে উৎপাদন কেন্দ্রে বিনিয়োগ বাড়ছে। ক্লোদিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার চিফ মেন্টর রাহুল মেহতা বলেন, “নতুন মানদণ্ড মেনে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানোই লক্ষ্য।”
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের মোট পোশাক রপ্তানি প্রায় ৩৮ বিলিয়ন ডলার, এর ২৯% যায় যুক্তরাষ্ট্রে। মুম্বইয়ের ক্রিয়েটিভ গ্রুপের ৮৯% রপ্তানি মার্কিন মুলুকে; চেয়ারম্যান বিজয় কুমার আগরওয়াল জানান, ক্রেতা ধরে রাখতে ৫–৭% পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তিনি সতর্ক করেন, শুল্ক বহাল থাকলে ছয় মাসের মধ্যে ১৫,০০০ শ্রমিকের মধ্যে ৬,০০০–৭,০০০ চাকরি হারাতে পারেন; কারখানা ওমান বা বাংলাদেশে সরানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতীয় পোশাক শিল্প যুক্তরাষ্ট্রে ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। এখন শুল্ক ১৫–৫০% হওয়ায় দাম প্রতিযোগিতায় চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে ভারত। বিনিয়োগকারীদের মতে, ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশাধিকার সহজ করতে দ্রুত এফটিএ সই, কার্বন-নিউট্রাল উৎপাদন ও ডিজিটাল ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করা জরুরি; অন্যথায় কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় দুটোই ঝুঁকির মুখে পড়বে।