ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের মজম বাজার গরু-ছাগলের হাট এখন রূপ নিয়েছে আধুনিক পশুহাটে। একসময় যেখানে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, হাসিল আদায়ের ঘর কিংবা গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না, সেখানে বর্তমানে ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য তৈরি হয়েছে নিরাপদ ও টেকসই অবকাঠামো। রয়েছে ঘাস বিক্রির পয়েন্টও।
আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) ও ডেনিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ডানিডা)-র অর্থায়নে, পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর সহযোগিতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস) কর্তৃক বাস্তবায়িত রুরাল মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ ট্রান্সফরমেশন প্রকল্প (আরএমটিপি)-এর আওতায় "নিরাপদ মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার উন্নয়ন" উপ-প্রকল্পের মাধ্যমে হাটের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর অংশ হিসেবে নির্মিত হয়েছে হাসিল আদায়ের ঘর, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, পশুর স্বাস্থ্য ও গর্ভধারণ পরীক্ষার ব্যবস্থা (ট্রাবিশ) এবং ট্রাক-ভ্যানসহ যানবাহনে পশু ওঠানো-নামানোর জন্য আধুনিক র্যাম্প।
এতে করে হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই পাচ্ছেন ঝামেলামুক্ত ও নিরাপদ সেবা। ব্যবসায়ী মো. আসাদুল্লাহ বলেন, “আগে পশু কেনাবেচার পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর ও অগোছালো। এখন অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে হাটে আগত মানুষ স্বস্তি ও নিরাপত্তা বোধ করছেন।”
হাটের পাইকার মো. হোসেন জানান, “আগে শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হতো। এখন আর সেই সমস্যা নেই।” আরেক ব্যবসায়ী হাসন বেপারি বলেন, “আগে ট্রাক থেকে গরু নামাতে গিয়ে অনেক সময় পশু আহত হতো। এখন র্যাম্প থাকায় গরু-ছাগল নিরাপদে ওঠানো-নামানো যায়।”
একই সঙ্গে এই হাটে রয়েছে ঘাস বিক্রির কেন্দ্র। বিক্রেতা ফকরুল আলম বলেন, “এই ঘাসগুলো গরু ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই কিনে থাকেন। এতে যেমন তারা লাভবান হচ্ছেন, তেমনি আমিও ঘাস বিক্রি করে উপকৃত হচ্ছি।”
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোসাঃ নাজনীন বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সরকারের পক্ষ থেকে যদি প্রতিটি হাট এভাবে উন্নয়ন করা যায় তবে এনিমাল ওয়েরফোর নিশ্চীত করা যেতো ।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান উজ্জামান জানান, “সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগে গ্রামীণ পশুহাটগুলো আধুনিক করা হচ্ছে। মজম বাজার হাট তারই একটি সফল উদাহরণ। এতে একদিকে পশুর স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও টেকসই বাজার ব্যবস্থা গড়ে উঠছে।”
হাটের আধুনিকায়নের ফলে এখন শুধু স্থানীয় ব্যবসায়ী নয়, আশপাশের উপজেলাগুলোর ব্যবসায়ী ও ক্রেতারাও এখানে ভিড় করছেন।