ভয়াবহ পানি সংকট, অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ ও ভূমিধসের ঝুঁকির কারণে রাজধানী তেহরান থেকে প্রশাসনিক কেন্দ্র সরানোর ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) হরমোজগান প্রদেশ সফরে গিয়ে তিনি বলেন, “এটি আর কোনো বিকল্প নয়, বরং জাতীয় বাধ্যবাধকতা।”
প্রেসিডেন্ট জানান, তেহরান, কারাজ ও কাজভিনসহ আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চরম পানি সংকট চলছে, অথচ কার্যকর সমাধান পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে রাজধানী স্থানান্তরের প্রস্তাব ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে পাঠানো হয়েছে।
গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, ১ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার এই শহর ইরানের মোট পানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ ব্যবহার করে। রাজধানীর ৭০ শতাংশ পানি আসে বাঁধ থেকে, বাকিটা ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। কিন্তু বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় বাঁধগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে, ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
২০২৪ সালে তেহরানে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ১৪০ মিলিমিটার, যেখানে স্বাভাবিক গড় ২৬০ মিলিমিটার। চলতি বছর তা নেমে এসেছে ১০০ মিলিমিটারের নিচে। এর ফলে পানির ঘাটতি মোকাবিলায় অন্যান্য অঞ্চল থেকে পানি আনতে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ৪ ইউরো।
পেজেশকিয়ান সতর্ক করে বলেন, “অতিরিক্ত উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার ভয়াবহ ধ্বংস ডেকে আনছে।” তার দাবি, তেহরানের কিছু এলাকায় প্রতিবছর গড়ে ৩০ সেন্টিমিটার ভূমিধস হচ্ছে—যা ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের স্পষ্ট ইঙ্গিত।
তিনি জানান, নতুন রাজধানী পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ উপকূলে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। তার ভাষায়, “এই অঞ্চল উন্মুক্ত সমুদ্রের প্রবেশাধিকার দেয়, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।”
এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও অন্যান্য নেতারাও রাজধানী সরানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবার পরিস্থিতি আরও সংকটজনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেহরানের পানি ও পরিবেশ পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে শুধু রাজধানী নয়, গোটা দেশই জলবায়ু ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।