ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) ব্যাঙ্কগুলোর মূল মূলধন বাড়ানোর জন্য বিদেশ থেকে চিরস্থায়ী ঋণ সংগ্রহের অনুমোদিত সীমা বৃদ্ধি করেছে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জারি করা একটি সার্কুলারে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়, যা দেশের ব্যাঙ্কিং খাতের আর্থিক স্থিতিশীলতা জোরদার করার লক্ষ্যে গৃহীত।
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সোমবার একটি সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাঙ্কগুলোর জন্য বিদেশি চিরস্থায়ী ঋণ (পারপেচুয়াল ডেট) সংগ্রহের সীমা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই ঋণ ব্যাঙ্কগুলোর টিয়ার-১ মূলধনের অংশ হিসেবে গণ্য হবে, যা তাদের আর্থিক ভিত্তি মজবুত করতে সহায়তা করে। চিরস্থায়ী ঋণ হলো এমন এক ধরনের ঋণ যার কোনো নির্দিষ্ট পরিশোধের মেয়াদ থাকে না এবং এটি ব্যাঙ্কগুলোর দীর্ঘমেয়াদি মূলধনের প্রয়োজনীয়তা পূরণে কার্যকর।
আরবিআই-এর এই পদক্ষেপ ভারতের ব্যাঙ্কিং খাতের মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (ক্যাপিটাল অ্যাডেকোয়েসি রেশিও) উন্নত করার প্রচেষ্টার অংশ। বিশেষ করে, বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে অস্থিরতা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই সিদ্ধান্ত ব্যাঙ্কগুলোকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আরও বেশি তহবিল সংগ্রহের সুযোগ দেবে, যা তাদের ঋণ প্রদানের ক্ষমতা বাড়াবে।
আরবিআই-এর একজন মুখপাত্র বলেছেন, “এই সীমা বৃদ্ধি ব্যাঙ্কগুলোর মূলধন কাঠামোকে শক্তিশালী করবে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।” তবে, সার্কুলারে নতুন সীমার নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি, যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটি ব্যাঙ্কগুলোর বর্তমান চাহিদা এবং বাজারের অবস্থার ওপর নির্ভর করবে।
এই পদক্ষেপের প্রেক্ষাপটে, ভারতের ব্যাঙ্কিং খাত গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে। আরবিআই ব্যাঙ্কগুলোর জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থা চালু করেছে, যাতে তারা বৈশ্বিক মানদণ্ড যেমন বাসেল-৩ নিয়ম মেনে চলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি ঋণের সীমা বাড়ানো ব্যাঙ্কগুলোর জন্য তহবিল সংগ্রহের নতুন পথ উন্মুক্ত করবে, তবে এটি বিদেশি মুদ্রার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এই ঘোষণা ভারতের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এটি ব্যাঙ্কগুলোর ঋণ প্রদানের সক্ষমতা বাড়িয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। তবে, বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন যে, ব্যাঙ্কগুলোকে এই ঋণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে এগোতে হবে, যাতে তারা অতিরিক্ত ঝুঁকির মুখে না পড়ে।