ওয়াশিংটন, ২৪ সেপ্টেম্বর — নরওয়ে, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও স্লোভেনিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্ররা পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোচ্ছে; ফলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের “একপক্ষীয় স্বীকৃতি নয়”—এই দীর্ঘনিয়ন্ত্রিত ইসরায়েল-কেন্দ্রিক নীতি প্রকট চাপে পড়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কূটনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
গত সপ্তাহে প্যারিস-রিয়াদ শীর্ষ সম্মেলনের পর নরওয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইডে সাংবাদিকদের বলেন, “১৯৬৭-সীমান্তে ভিত্তি করে পূর্ব জেরুজালেম রাজধানী করে স্বাধীন পালেস্তাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমাদের জাতীয় স্বার্থের অংশ; আমরা আগামী মাসে স্টকহোমে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ঘোষণা করব।” এরপরই স্পেন ও আয়ারল্যান্ড এক যৌথ বিবৃতিতে একই পথে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়; ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্যের মধ্যে অন্তত ১৫টি দেশ “সমন্বিত স্বীকৃতি”র সময়সূচি নির্ধারণে কাজ করছে বলে ব্রাসেলস-এর কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিক। হোয়াইট হাউসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) রয়টার্সকে বলেন, “একতরফা পদক্ষেপ শান্তি প্রক্রিয়াকে বিষিয়ে তোলে; আমরা মিত্রদের প্রতি আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছি—সরাসরি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রসমূহের স্বীকৃতিই আমাদের নীতি।” মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার পরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “হামাসকে উসকে দেওয়া হবে না; ইসরায়েলের নিরাপত্তা ছাড়া কোনো সমাধান টেকসই হবে না।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন ভাষণে মিত্রদের সিদ্ধান্তকে “পুরনো ইউরোপীয় ঔদ্ধত্য” আখ্যা দেন এবং হুঁশিয়ার করেন, “একপক্ষীয় স্বীকৃতি হলো সন্ত্রাসের পুরস্কার; টেল আভিভ নতুন করে আলোচনায় বসবে না যতক্ষণ না এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হয়।” ইসরায়েলি ক্যাবিনেট জরুরি বৈঠকে মঙ্গলবার “বিদেশি দূতাবাস তেল আভিভ থেকে পূর্ব জেরুজালেমে সরিয়ে নিলে প্রতিক্রিয়া” বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়; দেশটি ইতিমধ্যেই নরওয়ে ও স্পেনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ন্যাটো-জোটের ভেতরেও দ্বিধা দেখা দিয়েছে। ফ্রান্স ও বেলজিয়াম “ইউরোপীয় স্বায়ত্তশাসন” বলে চিহ্নিত করলেও জার্মানি এখনও “সময়সূচি নির্ধারণে ধীরে চলো” নীতি নিয়েছে। বার্লিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আমেরিকান সহযোগিতা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারব না; তাই ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমন্বয় জরুরি।” যুক্তরাজ্যের নতুন শ্রমিক সরকার এখনও আনুষ্ঠানিক অবস্থান না নিলেও লন্ডন-এর কূটনীতিক মহলে গুঞ্জন, “প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ২০২৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে পদক্ষেপ নিতে পারেন।”
পালেস্তাইন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একটি যৌথ প্রেস কনফারেন্সে বলেন, “মিত্রদের স্বীকৃতি আমাদের অধিকারের বাস্তবায়ন; আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো আটকে দেওয়ার চাপে পড়লেও আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়ছে।” হামাস-এর পলিটব্যুরো সদস্য খলিল আল-হায়্যা টেলিগ্রামে দাবি করেন, “একপক্ষীয় স্বীকৃতি আন্দোলনের জয়; আমাদের সংগ্রাম বৈধতা পেয়েছে।” তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দু’পক্ষই হামাসের এই বক্তব্যকে “প্রোপাগান্ডা” বলে নাকচ করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বিষয়টি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৬-এর মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান সেনেট প্রার্থীরা ইসরায়েল-বান্ধব ভোটারদের টার্গেট করছেন; ডেমোক্র্যাটরা মিত্রদের স্বীকৃতিকে “বহুপাক্ষিকতার জয়” হিসেবে তুলে ধরে ট্রাম্পের দ্বিপাক্ষিক নীতির সমালোচনা করছেন। কংগ্রেসের ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান সিনেটর জিম রিশ বলেন, “আমরা মিত্রদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেব না, তবে সামরিক সহায়তা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি বিবেচনা করব।” ডেমোক্র্যাট সদস্য গ্রেগরি মিক্স অবশ্য পরামর্শ দেন, “যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা; নইলে আমরা মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক একঘরে হয়ে পড়ব।”