ফেডারেল বোর্ড অব রেভিনিউ (FBR) সোমবার থেকে দেশজুড়ে “ডিজিটাল ট্র্যাকিং অ্যান্ড সার্ভেইল্যান্স” অভিযান চালু করেছে; সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ড্রোন ক্যামেরা ও বিলাসবহুল পণ্য (বিশেষ করে হীরা-গয়না) আমদানি ডেটা বিশ্লেষণ করে কর ফাঁকি শনাক্তের এই উদ্যোগ পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো হাতে নেওয়া হয়েছে।
FBR-এর নতুন “টাস্ক ফোর্স অন হাইডেন অ্যাসেটস”-এর প্রধান মোহাম্মদ সলিম খান সাংবাদিকদের বলেন, “গত দুই সপ্তাহে আমরা ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও টিকটক-এ ১১,৪০০-র বেশি প্রোফাইল স্ক্যান করেছি; যেখানে ব্যক্তিরা বিদেশি হীরার গয়না, বিলাসবহুল গাড়ি বা পোষা টাইগারের ছবি পোস্ট করেছেন কিন্তু আয়কর রিটার্নে তাদের বার্ষিক আয় ১.৫ মিলিয়ন রুপির নিচে দেখিয়েছেন।” এই অসঙ্গতি শনাক্ত করে কর্মকর্তারা ৮৪০ জনকে “নোটিশ অব প্রোভিশনাল অ্যাসেসমেন্ট” পাঠিয়েছে; আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সম্পদ ব্যাখ্যা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
অভিযানের অংশ হিসেবে কর বিভাগ পাঞ্জাব ও সিন্ধ প্রদেশের ১৭টি শহরে রাতারাতি ড্রোন উড়িয়ে বাড়ির ছাদে ও গাড়ি-গ্যারেজে দামি গাড়ি ও সোনার গয়নার সন্ধান নিয়েছে। লাহোরের ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ড্রোন ফুটেজে একটি বাড়ির ছাদে ২০০ কেজি ওজনের কাস্টম-মেড সোনার হরিণ মূর্তি দেখা যায়; পরবর্তী তল্লাশিতে বাড়ির মালিকের নামে কোনো সম্পদ ঘোষণা পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় ৩৫ মিলিয়ন রুপি (প্রায় ১২৫,০০০ মার্কিন ডলার) সমন্বয়কৃত কর দাবি করা হয়েছে।
বিলাসবহুল পণ্য আমদানি পথেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। করাচি পোর্টে গত সপ্তাহে ১৪ কেজি ওজনের দক্ষিণ আফ্রিকান হীরার খণি পাথর (রাফ ডায়মন্ড) জব্দ করা হয়; আমদানিকারক কোম্পানি এটি “শিল্প কাঁচামাল” হিসেবে ঘোষণা দিলেও FBR-এর ডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, একই আইএনএস নম্বরের প্রোফাইল ইনস্টাগ্রামে গয়না প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয়েছে। এই ঘটনায় ২২ মিলিয়ন রুপি শুল্ক ফাঁকি ধরা পড়েছে।
পাকিস্তানে কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৯.২ শতাংশ; আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) সাম্প্রতিক শর্ত অনুযায়ী ২০২৬ সালের মধ্যে একে ১৩ শতাংশে নিতে হবে। FBR চলতি অর্থবছরে ৯.৪ ট্রিলিয়ন রুপি রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে—যা গত বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি। “ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স” প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তারা এখন প্রতি সপ্তাহে ৫,০০০ সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট স্ক্যান করার পরিকল্পনা করেছেন; ভবিষ্যতে এআই-ভিত্তিক ইমেজ রিকগনিশন সফটওয়্যার যুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর একাংশ গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ইসলামাবাদ-ভিত্তিক ডিজিটাল রাইটস ফাউন্ডেশন বলছে, “সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্যানিংয়ে কোনো আদালতের অনুমতি নেওয়া হয়নি; ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষার নিশ্চয়তা দরকার।” FBR জবাবে বলেছে, তারা শুধু পাবলিক পোস্ট বিশ্লেষণ করছে এবং “পrivately shared কনটেন্ট” স্ক্যান করা হচ্ছে না।