অটোয়া, ২৪ সেপ্টেম্বর — প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বুধবার সংসদ ভবনে সাংবাদিকদের জানান, “উপযুক্ত সময়ে” চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে এবং তিনি “গঠনমূলক ও পারস্পরিক লাভজনক” বাণিজ্য আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর করার ব্যাপারে আশাবাদী; এই মন্তব্য ২০১৮-পরবর্তী উত্তেজনার পর কানাডা-চীন বাণিজ্য পুনরুজ্জীবনের প্রথক দিকটি সূচনা করল।
কার্নি-র সরকার গত মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো চীনা দূতাবাসের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা-স্তরের বৈঠক করেছে; পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জলি ও বাণিজ্যমন্ত্রী এমিলি আলগাব্রা শিগগিরই বেইজিং সফরের পরিকল্পনা করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা কৌশলগত স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও খাদ্য নিরাপত্তার দিকে নজর দিচ্ছি; চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি—তাদের সঙ্গে সিস্টেমেটিক, নিয়মভিত্তিক বাণিজ্য আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
২০২৪ সালে কানাডা-চীন দ্বিপাক্ষিক পণ্য বাণিজ্য ৮৮.৭ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারে পৌঁছায়; কানাডা থেকে রপ্তানি ২৮.৩ বিলিয়ন (মূলত খাদ্য তেল, কয়লা, লবণ), আমদানি ৬০.৪ বিলিয়ন (ইলেকট্রনিক্স, যন্ত্রপাতি)। কার্নি জোর দেন, “আমরা চীনে কৃষিজাত পণ্য ও ক্রিটিক্যাল মিনারেলসের বাজার বাড়াতে চাই; একই সঙ্গে আমাদের গ্রিন-টেক ও হাইড্রোজেন সেক্টরে বিনিয়োগের দরজা খোলা রাখব।”
তবে পথ কিন্তু মসৃণ নয়। ২০১৮ সালের মেং ওয়ানঝো গ্রেপ্তার, ২০২১-এর উইঘুর নিপীড়ন নিয়ে কানাডার নিন্দা ও চীনের পাল্টা নিষেধাজ্ঞা—এসব ঘটনায় সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। চীন এখনও কানাডার ক্যানোলা অয়েল ও সয়াবিন ওপর ২৯% অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক রেখেছে; কার্নি বলেন, “এই বাধাগুলো সরাতে আমরা WTO-র ডিসপিউট সেটেলমেন্ট ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথ খোলা রেখেছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার বাণিজ্য সম্পর্কও জটিল হওয়ায় চীনকে বিকল্প বাজার হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওয়াশিংটন-এর ২৫% ইস্পাত শুল্ক ও ইলেকট্রিক গাড়ির ১০০% ট্যারিফের জবাবে কার্নি প্রশাসন “ইন্দো-প্যাসিফিক বাজার বহুমুখীকরণ” নীতি গ্রহণ করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বুধবার বলেন, “বেইজিং কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক উন্নয়নে প্রস্তুত; আমরা আশা করি অটোয়া বৈষম্যহীন পরিবেশ সৃষ্টি করবে এবং হস্তক্ষেপমূলক রাজনৈতিক মন্তব্য এড়াবে।”
আগামী মাসে APEC সম্মেলন (পেরু) ও G২০ ফিনান্স মিনিস্টার বৈঠক (রিও) রয়েছে; কূটনীতিক সূত্র বলছে, সেখানে কার্নি ও সি চিন পিং-এর পাশাপাশি বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। কানাডার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দু’পক্ষ কৃষিপণ্য শুল্ক প্রত্যাহার, ক্রিটিক্যাল মিনারেলস সরবরাহ চেইন ও গ্রিন-হাইড্রোজেন যৌথ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখবে।