বেইজিং, ২৩ সেপ্টেম্বর — চীন সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দুই-কক্ষবিশিষ্ট কংগ্রেসের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বুধবার ঘোষণা করেছেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবাজারে বোয়িং-এর অবস্থান পুনরুদ্ধারে “বড় ধরনের অর্ডার” সামনে রয়েছে; চলতি বছরের শেষ নাগাদ ৮৫-টি ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৪৫-টি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার কেনার সম্ভাব্য চুক্তির আওতায় চীনা ক্যারিয়ারগুলোর প্রাথমিক অঙ্গীকারই এখন “ঐতিহাসিক” বলে প্রতিনিধিদলের নেতা সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার জানান।
২০১৭ সালের পর থেকে বাণিজ্য-যুদ্ধ, পণ্য শুল্ক ও ৭৩৭ ম্যাক্স দুর্ঘটনার জেরে বোয়িং-এর চীনা বাজারে অর্ডার প্রায় স্থবির ছিল। চীনা নাগরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAC) ২০১৯-এর মার্চে মডেলটির উড্ডয়ন নিষেধাজ্ঞা দিলে বোয়িং-এর দেশটিতে বিক্রি ৩০ শতাংশ কমে যায়। সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান ওয়ার্নারের নেতৃত্বে ছয়জন সিনেটর ও সাতজন প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য সোমবার বেইজিংয়ে পৌঁছান; মঙ্গলবার CAAC-এর প্রধান সান শাওয়ান এবং চায়না ইস্টার্ন, এয়ার চায়না ও চায়না সাউদার্ন-এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সিনেটর ওয়ার্নার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা দুই পক্ষের বাণিজ্যিক বিমান চলাচল নিরাপত্তা ও কারিগরি সনদ পারস্পরিক স্বীকৃতির পথে গুরুত্বপূর্ণ সমাধানে পৌঁছেছি; চুক্তি সম্পাদিত হলে এটি প্রায় ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি সম্ভাবনা তৈরি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯০,০০০ উচ্চ-দক্ষ কর্মসংস্থান সুরক্ষিত করবে।” চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান একই অনুষ্ঠানে জানান, “বেইজিং বিমানবাজারে প্রতিযোগিতামূলক পণ্যের প্রতি সবসময় খোলা; তবে যুক্তরাষ্ট্রকেও তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ‘সমান আন্তরিক’ হতে হবে।”
বোয়িং-এর চীফ ফিনান্সিয়াল অফিসার ব্রায়ান ওয়েস্ট সোমবার রাতেই ফোন ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমরা ৭৩৭ ম্যাক্স-এর পুনরায় সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া শেষ করতে CAAC-এর সঙ্গে কারিগরি ফাইল শেয়ার করছি; চুক্তি সম্পাদিত হলে ২০২৬-এর মধ্যে বছরে ৭০-টি ন্যারো-বডি ডেলিভারি সম্ভব হবে।” বোয়িং-এর শেয়ার নিউইয়র্ক প্রি-মার্কেটে খবরের পর ৪.২ শতাংশ উঠে ১৯৮.৭০ মার্কিন ডলারে পৌঁছায়, যা ২০২০-র পর সর্বোচ্চ একদিনের লাফ।
চুক্তির পথে বড় অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। কংগ্রেসের কিছু সদস্য শুল্ক-প্রযুক্তি ইস্যুতে সতর্ক; প্রতিনিধি পরিষদের চায়না কমিটির র্যাঙ্কিং সদস্য র্যাঙ্কিন বলেন, “বোয়িং-এর প্রযুক্তি সুরক্ষা নিশ্চিত না করে কোনো বড় অর্ডার অনুমোদনযোগ্য নয়।” অন্যদিকে চীনা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঘরোয়া C919 জ্যাটের উৎপাদন বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে বেইজিং-এর হাতে দর কষাকষির জোরালো কার্ড রয়েছে।
আগামী সপ্তাহে হাংজোতে G20 ট্রেড মিনিস্টার বৈঠক; সেখানে চূড়ান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দুই পক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চুক্তি সম্পাদিত হলে এটি ২০১৮-র পর চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য-যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় একক এয়ারক্রাফ্ট রপ্তানি চুক্তি হবে এবং বিশ্ববাণিজ্যে নতুন সম্পর্ক-সমীকরণের ইঙ্গিত দেবে।