যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ এচ-ওয়ান-বি ভিসার জন্য বিদেশে আবেদনকারীদের ওপর নতুন 'রিট্রো-অ্যাকটিভ' ফি আরোপ করায় ভারত ও চীনাসহ অন্তত ৮০ হাজার কর্মী বিমান টিকিট বদলে দ্রুত মার্কিন মাটিতে ফিরছেন। শুক্রবারের নির্বাহী আদেশটি আইনি অভিবাসন কমাতে ট্রাম্পের সর্বশেষ পদক্ষেপ, যা প্রযুক্তি শিল্পে হতাশা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।
আদেশ অনুযায়ী, ১ অক্টোবর ২০২৪-এর পর যাঁরা বিদেশে থেকে এচ-ওয়ান-বি নবায়ন বা স্ট্যাম্পিং করবেন, তাঁদের জন্য ৬ হাজার ডলার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে; একই সঙ্গে ৪০০ শতাংশ 'এক্সপ্রেস প্রসেসিং সারচার্জ' যোগ হয়েছে। শুল্কবৃদ্ধি ২১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত থেকেই কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়, ফলে বিদেশ সফরে থাকা কর্মীরা আগের ফি-তে ফিরতে দেশে ফেরার তাড়া দেখান।
নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শনিবার ভোর থেকেই দেখা যায় দীর্ঘ ইমিগ্রেশন লাইন। বেঙ্গালুরু থেকে ছেড়ে আসা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অর্জুন রেড্ডি জানান, ‘টিকিট ৮০০ ডলার থেকে ২ হাজার ৩০০ ডলারে কিনতে হয়েছে; স্ট্যাম্পিং ফি বাঁচাতে ১৬ ঘণ্টার ফ্লাইটে দাঁড়িয়েই ছিলাম।’ সান ফ্রান্সিসকোতে কর্মরত চীনা ডেটা সায়েন্টিস্ট লি জিং বলেন, ‘পারিবারিক অনুষ্ঠান ছেড়ে দ্রুত ফিরে আসতে হলো; এখনো বুঝতে পারছি না আদেশটি আইনি না নিয়ম-বহির্ভূত।’
গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপলসহ ১০০-র বেশি কোম্পানির সংগঠন 'টেক নেট' এক যৌথ বিবৃতিতে বলে, ‘হঠাৎ ফি বৃদ্ধি দক্ষতা ও উদ্ভাবনের গতি কমিয়ে দেবে; প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি প্রতিভা নিয়োগে অনিশ্চয়তায় পড়েছে।’ সিলিকন ভ্যালি ভিত্তিক স্টার্ট-আপ এলায়েন্সের মতে, ২০২৬ সালের মধ্যে এচ-ওয়ান-বি খরচ ৩৫ শতাংশ বেড়ে যাবে, যা ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘প্রায় অসহনীয়’।
অভিবাসন আইনজীবীদের একটি জোট শনিবারই ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতে মামলা দায়ের করে দাবি করেছে, ‘নির্বাহী আদেশটি প্রশাসনিক পদ্ধতি আইন লঙ্ঘন করেছে; কোনো নোটিশ-ও-কমেন্ট পিরিয়ড ছাড়াই ফি বাড়ানো হয়েছে।’ মামলার প্রাথমিক শুনানি সোমবার হওয়ার কথা, যাতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক মুখপাত্র বলেন, ‘মার্কিন শ্রমবাজার রক্ষা ও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার টেক ছাঁটাইয়ের প্রভাব মোকাবিলায় এই পদক্ষেপ; অর্থনৈতিক চাপ কমাতে আমেরিকান কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’ তবে সাবেক সিনেটর ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ম্যারি কেইটেন বলেন, ‘ফি বাড়িয়ে আইনি অভিবাসন বন্ধ করা হলে অবৈধ পথে প্রবেশের ঝুঁকি বাড়বে।’
ভিসা-ধারকদের অনেকেই এখনো বিদেশে অপেক্ষমান; তাঁরা আদালতের সিদ্ধান্ত না-আসা পর্যন্ত টিকিট বাতিল করেছেন। কনসাল্টিং ফার্ম 'এনভায়েবল' জানিয়েছে, কমপক্ষে ১২ হাজার এচ-ওয়ান-বি আবেদন স্থগিত হয়েছে; প্রতিষ্ঠানগুলো কানাডা বা ইউরোপীয় দেশে সাব-অফিস খোলার পরিকল্পনা করছে বলে সূত্র জানা গেছে।