উহানে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের প্রথম দফার অনুসন্ধানী রিপোর্ট করার জন্য ২০২০ সালে কারাবন্দি হওয়া চীনা সাংবাদিক ঝ্যাং ঝানের সাজা আরও চার বছল বাড়িয়েছে শাংহাই একটি আদালত বলে জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (RSF) ও অন্যান্য মানবাধিকার গোষ্ঠী। একই ধারায়—‘তর্ক বা বিতণ্ডা উসকে দেওয়া’—নতুন মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে বলে সংগঠনগুলোর অভিযোগ।
পূর্ববর্তী চার বছলের সাজা শেষে ২০২৪ সালের মে মাসে মুক্তি পেলেও গত আগস্টে পুনরায় গ্রেপ্তার হন ঝ্যাং। RSF-এর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত এক বছল ধরে তাঁকে বিশ্বব্যাপী নজরদারি থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল; শাংহাই আদালতে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত বিচারে কূটনীতিক ও সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।’ একই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় বিচারক নতুন চার বছলের কারাদণ্ড দেন বলে সংগঠনটি জানায় ।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সুইডেনসহ সাতটি দেশের কূটনীতিক বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের অনুমতি চাইলেও ‘কাগজপত্র অসম্পূর্ণ’ বলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিভাগ এক বিবৃতিতে ‘সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়নের নিন্দা’ করে ঝ্যাং ঝানের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে ।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে উহানে স্মার্টফোনে লাইভ স্ট্রিম করে হাসপাতালের ভিড়, মৃতদেহের সারি ও কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়ার ত্রুটি তুলে ধরেন তিনি। ওই বছলের মে মাসে গ্রেপ্তারের পর ‘তর্ক বা বিতণ্ডা উসকে দেওয়া’ ধারায় চার বছলের সাজা হয়। কারাগারে অনশন করায় তাঁকে জোর করে গ্যাস্ট্রিক টিউবে খাওয়ানো হতো বলে জানায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল; ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেও একই অবস্থার কথা জানানো হয় ।
বিচার আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই মামলায় আমরা গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করছি না।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়াও এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দাবি করেন, ‘চীনে আইন সবার জন্য সমান; বিচারকাজে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।’ তবে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে নতুন সাজার কথা স্বীকার করা হয়নি ।
ঝ্যাং ঝানের মামলাকে ‘মহামারী-পূর্ববর্তী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশে সাংবাদিকতার দমন-পীড়নের নমুনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স-এর পূর্ব এশিয়া প্রধান সেড্রিক আলভিয়ানি। তিনি বলেন, ‘এই অতিরিক্ত সাজা চীনে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আরও এক হুমকি, যাতে অন্য সাংবাদিকরা সতর্ক হয়ে যায় সরকার-বিরোধী তথ্য প্রকাশে।’