রাশিয়া শুক্রবার গভীর রাতে ইউক্রেইনজুড়ে একযোগে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে কিয়েভ। কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এতে তিনজন নিহত ও কমপক্ষে ৩৮ জন আহত হয়েছেন; বিদ্যুৎ-শিল্প স্থাপনা আর বসতবাড়ি লক্ষ্য করে চালানো এই আক্রমণে ‘সোয়ার্ম ড্রোন’ কৌশলের ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে।
ইউক্রেনীয় বায়ুসেনা জানায়, রাত সোয়া দুইটার দিকে ৭০টি ‘শাহেদ’ আক্রমণাত্মক ড্রোন ও ১২টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র একসঙ্গে ছোড়া হয়। তাদের দাবি, ৫৮টি ড্রোন ও নয়টি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা সম্ভব হলেও বাকিগুলো বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হানে।
কিয়েভ সিটি স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রধান সের্গি পোপকো বার্তা সংস্থা ‘ইউক্রিনফর্ম’-কে বলেন, ‘শত্রু এবার একসঙ্গে বহু দিক থেকে ছোট ছোট ড্রোন ছুড়ে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এ ধরনের সোয়ার্ম ট্যাক্টিকস আগে এত বড় পরিসরে দেখা যায়নি।’
নিহতদের মধ্যে দু’জন দনেতস্ক অঞ্চলের ক্রামাতোর্সক শহরে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে আঘাতে পড়ে মারা যান; অপরজন ওডেসা বন্দরনগরীর একটি বহুতল ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণে নিহত হন। সেখানে অন্তত ১৪ জনকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জরুরি সেবা বিভাগ।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি টেলিগ্রামে দেওয়া বার্তায় বলেন, ‘রাশিয়া আবারও নাগরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করছে, কারণ সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে তারা ব্যর্থ হয়। আমরা আকাশকে আরও নিরাপদ করতে পশ্চিমা সহযোগীদের কাছে অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা সিস্টেম চেয়েছি।’
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা ‘সামরিক স্থাপনা ও শক্তিশালী শক্তি কেন্দ্র’ ধ্বংস করেছে। তবে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, আক্রান্ত স্থাপনাগুলোর অধিকাংশই বেসামরিক ব্যবহারে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প-ইউনিট ও আবাসিক এলাকা।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সমন্বয়কারী ডেনিস ব্রাউন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বেসামরিক অবকাঠামোতে এ ধরনের নির্বিচার আঘাত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে।’ তিনি হামলার স্বতন্ত্র তদন্তের আহ্বান জানান।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শীতকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ-তাপ উৎপাদন ক্ষমতা দুর্বল করাই রাশিয়ার এ কৌশলের মূল লক্ষ্য। ইউক্রেনীয় গ্রিড অপারেটর ‘উক্রেনেরগো’ জানিয়েছে, হামলায় দেশটির পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে জরুরি লোড-শেডিং বাড়ানো হয়েছে।