যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উচ্চ শুল্ক ও বিশ্বব্যাপী চাহিদা মন্দার চাপে জাপানের রপ্তানি আগস্ট মাসে টানা চতুর্থ মাস কমেছে। কাস্টমস তথ্যে দেখা যায়, গাড়ি ও গাড়ি-খাতের যন্ত্রাংশ রপ্তানি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা টোকিও-ওয়াশিংটন বাণিজ্য উত্তেজনা ও স্থানীয় শিল্পের জন্য নতুন করে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাপানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত হিসাবে, আগস্টে রপ্তানি গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৫.৮% কমে ৭.১ ট্রিলিয়ন ইয়েনে (প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার) দাঁড়িয়েছে—বাজার ধারণার চেয়ে খারাপ (পূর্বাভাস ছিল –৪.১%)। যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো গাড়ি রপ্তানির পরিমাণ কমেছে ১৮.৭%, যেখানে জুন-জুলাই গড়ে ছিল ১২% পতন। টয়োটা, হোন্ডা ও নিসান—তিন প্রতিষ্ঠানই জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের ২৫% অতিরিক্ত অটো শুল্কের কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম ৮–১০% বাড়িয়েছে, ফলে চাহিদা কমেছে। গাড়ি-খাতের যন্ত্রাংশ রপ্তানি ১০.৯% কমেছে; সেমিকন্ডাক্টর মেশিনারিজ ৭.৪% নেমে গেছে।
আমদানির চিত্র আরও নাজুক। আগস্টে আমদানি ৯.২% কমে ৬.৯ ট্রিলিয়ন ইয়েনে দাঁড়িয়েছে—চীন থেকে কাঁচামাল ও জ্বালানি কেনা কমেছে। ফলে বাণিজ্য সারপ্লাস দাঁড়িয়েছে মাত্র ০.২ ট্রিলিয়ন ইয়েন, যা গত বছরের একই মাসের ০.৭ ট্রিলিয়নের চেয়ে কম। রয়টার্স সমীক্ষায় ১৭ জন অর্থনীতিবিদের গড় মূল্যায়ন—রপ্তানি পতনের ধারা চলবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, চতুর্থ প্রান্তিকে ফিরবে ১–২% প্রবৃদ্ধি।
জাপান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (JAMA) জানায়, জুলাই-আগস্টে উত্পাদন কাটব্যাক ১১%—যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো এসইউভি ও হাইব্রিড মডেলের ইউনিট কমেছে ২২%। কোম্পানিগুলো এখন মেক্সিকো ও কানাডায় অ্যাসেম্বলি বাড়ানোর কথা ভাবছে; টয়োটা কেন্টাকি প্ল্যান্টে শিফট কমিয়েছে ১৫%। হোন্ডা এক বিবৃতিতে বলে, “শুল্ক প্রত্যাহার না হলে ২০২৬ মডেল ইয়ারে আমেরিকান ডিলারদের সরবরাহ ৩০% কমতে পারে”।
ব্যাংক অব জাপানের সর্বশেষ ট্যাঙ্কান জরিপে রপ্তানিকারকরা “মৃদু পতন” প্রত্যাশা করছেন; তবে কম দরের ইয়েন (১৪০-১৪১/ডলার) কিছুটা প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিচ্ছে। মিতসুবিশি ইউএফজে রিসার্চের চিফ ইকোনোমিস্ট শিনিচি কিউওয়াতা বলেন, “শুল্ক-ঘাটতি ও বিশ্ব চাহিদা মন্দা—দুই-ই রপ্তানিকে চাপে রাখছে; ইয়েন দুর্বলতা কেবল আংশিক প্রতিরোধ করছে”।
ট্রেড মিনিস্টার ইয়োশিহারু কাতাও বলেছেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাঠামাগত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে অটো শুল্ক প্রত্যাহার হয়”। টোকিও-ওয়াশিংটন বাণিজ্য কৌশলগত বৈঠকের পরবর্তী রাউন্ড অক্টোবরে হওয়ার কথা। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নির্বাচনী বছরে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক-ছাড় দিতে অনিচ্ছুক; ফলে জাপানি রপ্তানিকারকদের অপেক্ষা দীর্ঘ হতে পারে।