ভোলার মনপুরায় ফোর মার্ডার মামলার আসামীদের বিচারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভূ্ক্তভোগী মামলার বাদী পক্ষ। এসময় তারা অভিযোগ করে বলেন, ভোলার মনপুরায় ২৩ বেছরেরও বিচায় হয়নি আলোচিত ফোর মার্ডার মামলার আসামীদের।গত ২৩বছর যাবৎ বিচারের দাবীতে বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়াতে দৌড়াতে বর্তমানে ক্লান্ত হয়ে পরেছেন মামলার বাদি পক্ষ। বিচার বিভাগে টাকা ছিটিয়ে একের পর এক ষ্ট্রে অর্ডার করিয়ে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রাস্ত করে যাচ্ছে এ মামলার প্রভাবশালী আসামীরা। অন্যদিকে মামলাটি ধামা চাপা দেয়ার সড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি মহল।দেশের অন্ধ ও বিবেকহীন বিচার বিভাগ, বর্তমানে জিম্মি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে।যার জন্য প্রকাশ্যে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে আসামীরা। অন্যদিকে তারা মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকী ধামকী অব্যাহত রেখেছে এ নজির বিহীন আলোচিত মামলার বাদিপক্ষকে।
উল্লেখ্য, গত ২০০৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে, জেলেদের ভাগ্যবদলে সুদমুক্ত দাদনের কথা মাইকে প্রচার করতে গিয়ে মনপুরার চর নিজামের, লতার খাল এলাকায়, মন্নান চেয়ারম্যান, সিদ্দিক কোম্পানী ও সেরু কোম্পানীসহ একটি সঙ্গবদ্ধ প্রভাবশালী জলদস্যু চক্রের হাতে প্রকাশ্যে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন হাজি আবু তাহের, ইউছুফ দালাল, আলম সিরাং ও জাহানারা বেগম।
ইউছুফ দালালের স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, চরনিজামের মাছঘাটের পাশে সরকারি গুচ্ছগ্রামে বাস করতেন তারা। তার স্বামীও জেলেদের অতি আপনজন ছিলেন। হাজি তাহেরের ঘোষণার সময় ওই ট্রলারে তার স্বামীও ছিলেন। তাকেও কুপিয়ে, শরীরে লবণ-মরিচ মেখে, বরফচাপা দিয়ে নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। ওইদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হামলায় নিহত জাহানারা বেগমের মেয়ে তাছনুর বেগম জানান, তিনি এই নৃশংস নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা দেখেছেন। তাদের বাড়ি চরনিজামের পাশে লতাখালি এলাকায়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মন্নান মিয়ার নির্দেশে তার পালিত লোকজন ১৭টি ট্রলার নিয়ে আবু তাহেরকে ধাওয়া দেয়। আবু তাহের লতাখালি ঘাটে ট্রলার ভিড়িয়ে দৌড়ে জাহানারা বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ওই ঘর থেকে তাকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। তাসনুরের মা জাহানারা বেগম আবু তাহেরকে বাঁচাতে ছুটে যান। তাকেও হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের সময় ১২ বছরের শিশু মো. হাসান মেহেদীর বয়স এখন ৩৪ বছর।এ প্রতিবেদকের কাছে বাবা হারানোর বেদনা ও দীর্ঘ সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
দ্বীপজেলা ভোলার মনপুরা উপজেলাসহ জেলার ২১টি দ্বীপচরে বাস করেন দুই লাখ জেলে। যারা সরাসরি মাছ ধরা পেশায় জড়িত। কিন্তু তারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন দাদনদারদের কাছে। তাদের কাছ থেকে নেওয়া দাদনের (ঋণ) টাকায় জেলেদের নৌকা তৈরি ও জাল কিনতে হয়। বছরের পর বছর দাদন ব্যবসায়ীদের গদিতে (আড়তে) শোধ হয় না ঋণ। দাদনের বেড়াজাল থেকে মুক্তি মেলে না। বরং নেমে আসে নির্মম নির্যাতন ও মৃত্যু। হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও বিচার পান না দরিদ্র জেলেরা। তাদের সামনে নির্মম হত্যাকাণ্ড হলেও তারা প্রতিবাদ জানাতে পারেননি। গেল ২২ বছরেও বিচার পায়নি ওই চার পরিবার। নদী ও উপকূলের জীবন যেন নদীর ভাঙনের মতো হারিয়ে যায়। এরপরই নদীতে মাইকিং করে বয়সের ভারে ন্যুজ রাজিয়া বেগম জানান, তার স্বামী আবু তাহের ছিলেন সাধারণ জেলেদের আপনজন। মাছ ধরার পেশায় থাকা অবস্থায় জেলেদের সব সময় উপকার করতেন। জেলেদের সঙ্গে পরামর্শ করে ২০০৩ সালে চরনিজাম মাছঘাট ইজারা নেন আবু তাহের। ঘোষণা দেন, এখন থেকে ঘাটে কারও কর দিতে হবে না। দানের জন্য সুদ দিতে হবে না। জলদস্যুদের একজোটে মোকাবিলা করা হবে। এমন ঘোষণায় হাজারো জেলে আবু তাহেরকে সমর্থন জানিয়ে তার ঘাটে ভিড় জমাতে থাকেন। এটি মেনে নিতে পারেনি দীর্ঘদিন জেলেদের শোষণ করা দাদন ব্যবসায়ীরা। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে আবু তাহের ও তার ঘনিষ্ঠদের নির্মমভাবে হত্যা করে।