চীনের সঙ্গে গত মাসের ইউরোপীয় ইউনিয়ন শীর্ষ বৈঠকে রপ্তানি-নিয়ন্ত্রণ শিথিলের আশ্বাস সত্ত্বেও বেইজিং বিরল মৃত্তিকা (রেয়ার আর্থ) উপাদানের কড়া কোটা বহাল রেখেছে। ফলে গাড়ি ও সেমিকন্ডাক্টর খাত—যারা এই খনিজের ওপর নির্ভরশীল—আবারও উৎপাদন বন্ধ ও ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে সতর্ভ করেছেন ইউরোপীয় উদ্যোক্তারা।
ইউরোপীয় কমিশনের বাণিজ্য দপ্তরের এক জরিপে ১৮০টি কোম্পানি জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর কোয়ার্টারে নিওডিমিয়াম, প্রাসিওডিমিয়াম ও ডিসপ্রোসিয়াম—এই তিন ধাতুর সরবরাহ ৩০% কমেছে। চীনা কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি কমেছে ২৭%—গত বছরের একই সময়ের তুলনায়। কোটা ব্যবস্থার অধীনে, চীনা রপ্তানিকারকদের প্রতি শিপমেন্টে বিশেষ অনুমোদন নিতে হচ্ছে, যার প্রক্রিয়া ৪৫ দিন পর্যন্ত সময় নিচ্ছে এবং দাম ১৫-২০% বেড়েছে।
ভক্সওয়াগেন ও বিএমডব্লিউ—দুই প্রতিষ্ঠানই জানিয়েছে, তাদের জার্মানি ও চেক কারখানায় ইভি মোটর ও ট্রান্সমিশন উৎপাদন সপ্তাহে দুই দিন কমানো হয়েছে। সেমিকন্ডাক্টর প্যাকেজিং কোম্পানি এএমকোর (নেদারল্যান্ডস) বলে, “ডিসপ্রোসিয়াম অক্সাইড ছাড়া লেজার ডায়োড তৈরি বন্ধ; আমরা মার্কিন ও অস্ট্রেলিয়ান খনি থেকে বিকল্প সরবরাহ খুঁজছি, কিন্তু খরচ ৪০% বেশি”।
চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “রেয়ার আর্থ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ পরিবেশগত কারণে এবং দেশীয় উৎপাদন চাহিদা মেটাতে; কোটা প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও আইনসম্মত”। তবে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে রয়টার্সকে বলেন, “জুলাইয়ের ইউ-চীন শীর্ষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি বলেছিলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হবে’; কিন্তু আগস্ট-সেপ্টেম্বর ডেটা তার বিপরীত”। কমিশন ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভালদিস ডোমব্রোভস্কিস এক চিঠিতে চীনা প্রধানকে স্মরণ করিয়ে দেন, “রেয়ার আর্্থ সরবরাহ স্থিতিশীল না হলে ২০২৬ সালের আগে ইউরোপীয় গ্রিন ডিল লক্ষ্য হুমকির মুখে পড়বে”।
বিকল্প সরবরাহের চেষ্টা ত্বরান্বিত হচ্ছে। ফরাসি খনি কোম্পানি আইসি আরএইচটি মালাগায় (স্পেন) নিওডিমিয়াম উত্তোলন ২০২৮ সালের মধ্যে তিনগুণ করার পরিকল্পনা জানিয়েছে; ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ৬০০ মিলিয়ন ইউরো ঋণের অনুমোদন দিয়েছে। সুইডেনের এলকেমা লুলেয়ায় নতুন সেপারেশন প্ল্যান্ট নির্মাণে ১.২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে; তবে উৎপাদন শুরু হবে ২০৩০ সালে। “আমরা চীনের ওপর ৯৮% নির্ভরতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৭৫%-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্য রেখেছি,” বলেন ইউ কমিশনের ক্রিটিক্যাল র মেটারিয়াল্স অফিসার মারোস শেফচোভিচ।
অটো খাতে ক্ষতি ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। ইউরোপীয় অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (ACEA) জানায়, সেপ্টেম্বরে ইভি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১২% কমানো হয়েছে; ৪৫,০০০ কর্মী ছুটিতে পাঠানো হয়েছে জার্মানি ও স্লোভাকিয়ার প্ল্যান্টে। চীনা রপ্তানি-নিয়ন্ত্রণের কারণে ম্যাগনেট খরচ ২,০০০ ইউরো প্রতি গাড়ি বেড়েছে—যা ইউরোপীয় ইভির দাম ৮% বাড়িয়ে দিয়েছে বলে এসিউরা কনসাল্টিং-এর হিসাবে দেখা গেছে।
আইএমএফ-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, “রেয়ার আর্থ সরবরাহ ঘাটতি ২০২৬ সালের মধ্যে বিশ্ব ইভি বিক্রি ১৫% কমিয়ে দিতে পারে”। ইউরোপীয় কমিশন ইতিমধ্যে WTO-তে চীনা রপ্তানি-কোটার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার হুমকি দিয়েছে; বেইজিংয়ের পাল্টা বার্তা, “WTO-র নিয়মে পরিবেশগত রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের বিধান আছে”।