তিন বছর আগে “অবিনিয়োগযোগ্য” বলে মন্তব্য করা চীনের ১৯ ট্রিলিয়ন ডলারের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আবার ফিরছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বায়োটেক ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো খাতে উদ্ভাবনের সম্ভাবনা, পাশাপাশি বিশ্ববাজারে বিনিয়োগ বিভাজনের প্রয়োজন—এই দুই কারণেই আগ্রহ বাড়ছে, যদিও চীনা অর্থনীতির মৌলিক দুর্বলতা এখনো রয়ে গেছে।
মার্কিন বিনিয়োগ জায়ান্ট ব্ল্যাকরক, ব্রিটিশ অ্যাবারডিন ও নরওয়ের সরকারি পেনশন ফান্ড—তিনটি প্রতিষ্ঠানই সাম্প্রতিক মাসে শেনঝেন-সাংহাই কম্পোজিট শেয়ারে নতুন অবস্থান নিয়েছে। MSCI চীন সূচক গত ছয় মাসে ১৮% বেড়েছে, যেখানে MSCI ওয়ার্ল্ড ৭% উঠেছে। ফরাসি ব্যাংক বিএনপি পরিবেশকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে বিদেশিদের নিট ক্রয় ৭.৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২-এর মার্চের পর এক মাসের সর্বোচ্চ। ব্ল্যাকরক চায়না ইটিএফ-এর সম্পদ ছয় মাসে ৪.২ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ১৩.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
“বিশ্ববাজারে বিনিয়োগ বিভাজনের চাপে চীনা টেক এখন ‘আন্ডার-ওনার’ থেকে ‘মডারেট ওভারওয়েট’ হচ্ছে,” বলেন অ্যাবারডিন-এর এশিয়া স্ট্র্যাটেজিস্ট এড উইন-চ্যান। তিনি যোগ করেন, “এআই চিপ ডিজাইনার ক্যামব্রিকন, ড্রাগ ডিসকাভারি প্ল্যাটফর্ম ওয়াংসি বায়ো এবং সোলার ইনভার্টার নির্মাতা সানগ্রো পাওয়ার—এই তিন কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধির গতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সমকক্ষদের চেয়ে দ্রুত”।
অর্থনীতির মৌলিক চিত্র এখনো দুর্বল। চীনা বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শিল্প উৎপাদন গত দুই মাসে ০.৫% বেড়েছে, যা প্রাক-কোভিড গড়ের অর্ধেক। বেকারত্ব শহরাঞ্চলে ৫.২% এবং ১৬-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ২০%-এর বেশি। রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ ১০% কমেছে; রপ্তানি কেবল ৩% বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ০.২৫% সুদ-কাটা এবং ২৭৫ বিলিয়ন ইউয়ান ফিসকাল স্টিমুলাস শেয়ারবাজারে তরলতা বাড়িয়েছে।
“মৌলিক চাহিদা দুর্বল, তবে নতুন খাতে উদ্ভাবনের গতি বিদেশিদের টানছে,” বলেন শেনঝেন-ভিত্তিক হেজ ফান্ড ম্যানেজার লিউ জিয়ান। এআই-এর জন্য চীপ ছাড়াও বায়োটেকে নতুন ড্রাগ ক্যান্ডিডেট সংখ্যা গত বছর ৪০% বেড়েছে; নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদেশি পার্টনারশিপ ২৫% উত্থান। চীনা নিয়ন্ত্রকেরা বিদেশি মালিকানার সীমা ৪৯% থেকে বাড়িয়ে ৫১% করেছে এবং কিউএফআইআই কোটা সহজ করেছে; ফলে পোর্টফোলিও প্রবাহ বেড়েছে।
রিস্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় টিকটক ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে অগ্রগতি না হলে শুল্ক-প্রতিরোধের ঝুঁকি আবারও বাজারকে নাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া চীনা অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদা যদি না বাড়ে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা “গ্রোথ মাল্টিপল”-এর আশায় এসে আয়-প্রবৃদ্ধির ঘাটতি দেখতে পারেন। তবে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস-এর চায়না স্ট্র্যাটেজিস্ট কেইশি কুওয়ামুরা মনে করেন, “বিশ্ব পোর্টফোলিওতে চীনের ওজন এখনো ৩০% কম; বিদেশিদের আস্তে আস্তে ওভারওয়েট হওয়ার প্রবণতা চলবে, যতক্ষণ না মৌলিক মুনাফা হোঁচট খায়”।