মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সোমবারের রাষ্ট্রীয় সফরের ঠিক আগে গুগল যুক্তরাজ্যে পাঁচ বিলিয়ন পাউন্ড (৬.৮ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। পরিষ্কার জ্বালানি উদ্যোগ ও অংশীদারিত্ব—বিশেষ করে শেলের সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরে সহযোগিতা—এই অর্থের বড় অংশ ব্যয় হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গুগল সিইও সুন্দর পিচাই লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “২০২৬-২৮ সময়কালে আমরা ব্রিটেনে দুটি নতুন ডেটা সেন্টার গড়ে তুলব, যা ১০০% নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে চলবে এবং ১.২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ ধারণক্ষমতা রাখবে”। এর জন্য কোম্পানিটি উত্তর ইংল্যান্ডের হাওবার ও স্কটল্যান্ডের উইটার্নেসে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছে; প্রতিটি সাইটে প্রায় ১,২০০ স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ১.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে অফশোর বায়ু খাতে—গুগল ও শেল যৌথভাবে ডগার ব্যাংক প্রকল্পে ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন টারবাইন বসাবে, যা ১ মিলিয়ন ঘরবাড়ির বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
বিনিয়োগের অর্থায়নে গুগল গ্রিন বন্ড ( sustainability bond) থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করবে; বাকি অংশ নগদ মজুদ ও ব্যাংক ঋণ থেকে আসবে। যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী রেচেল রিভস ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এটি পরিষ্কার প্রযুক্তিতে ১১,০০০ চাকরি ও ৬.৮ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি অর্থায়নের বার্তা দেয়—ব্রিটিশ অর্থনীতির জন্য আস্থার ভোট”। সরকার জানায়, ডেটা সেন্টার দুটির বিদ্যুৎ-সংযোগে ৩০০ মিলিয়ন পাউন্ড গ্রিড-স্ট্রেংদেনিং বিনিয়োগ করবে এবং কর্পোরেট কর হার ২৫% থেকে কমিয়ে ২২% করার প্রস্তাব বিবেচনা করছে।
শেলের সিইও ওয়াইয়ান বোয়ার্নস এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “গুগলের ডেটা-সেন্টার ও আমাদের অফশোর বায়ু সমন্বয়ে কার্বন-নিউট্রাল ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের পথ তৈরি করবে”। দুই কোম্পানি ১০ বছর মেয়াদী “গ্রিন পাওয়ার পারচেস অ্যাগ্রিমেন্ট” (PPA) সই করেছে, যাতে টারবাইন থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ৪.৫ সেন্ট/কিলোওয়াট-আওয়ারে বিক্রি করবে—বর্তমান বাজার দরের চেয়ে ২০% কম। এতে অপারেটিং খরচ কমবে বলে গুগল জানায়।
ট্রাম্প প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “বেসরকারি খাতের বড় বিনিয়োগ আমেরিকান-ব্রিটিশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে সহায়তা করবে; প্রেসিডেন্টের সফরে এ বার্তা গুরুত্ব পাবে”। ট্রাম্প এক বিবৃতিতে দাবি করেন, “আমার প্রশাসনে কর্পোরেট কর কাটা ও নিয়ন্ত্রণ-হ্রাসের ফলেই এমন বিনিয়োগ সম্ভব হয়েছে”। তবে যুক্তরাজ্যের বিরোধী কনজারভেটিভ দলের ছায়া ক্লাইমেট মিনিস্টার এড গিলমোর সমালোচনা করে বলেন, “গুগলের বিনিয়োগ স্বাগত, তবে সরকার নিজস্ব নবায়নযোগ্য কৌশলের অভাবে বেসরকারি প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করছে”।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বিনিয়োগকে স্বাগত জানালেও বিদ্যুৎ-সংযোগে গ্রিড-স্ট্রেংদেনিং-এর জন্য আরও ত্বরিত অনুমোদন দাবি করেছে। গ্রিনপিস ইউকে-এর প্রধান ডগ পার বলেন, “ডগার ব্যাংকের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ গিগাওয়াট লাইসেন্স দিতে হবে”। গুগল জানায়, নতুন ডেটা সেন্টারগুলো ঠান্ডা-জলীয় কুলিং ও এআই-চালিত এনার্জি ম্যানেজমেন্ট ব্যবহার করবে, ফলে কার্বন উৎপাদন ৯০% কমবে এবং পানি ব্যবহার ৩০% সাশ্রয় হবে।