চলতি বছর চীনের ইস্পাত রপ্তানি সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স-এর বিশ্লেষণ। দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা মন্দা ও উৎপাদন খরচ কম থাকায় সস্তা ইস্পাত বিদেশে ছাড়ার চাপ বাড়ছে, যা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের আরও কঠোর সুরক্ষামূলক শুল্ক আরোপের পথ তৈরি করছে।
চীনা কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-আগস্টে ৭৫.৮ মিলিয়ন টন ইস্পাত রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০.৬% বেশি। রয়টার্স-এর গণনায়, বছর শেষে মোট রপ্তানি ১১৫ মিলিয়ন টন ছাড়িয়ে ২০১৫-এর পূর্ববর্তী রেকর্ড ১১২ মিলিয়ন টনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। অভ্যন্তরীণ বাজারে গৃহনির্মাণ ও প্রকল্প বিনিয়োগ মন্দায় দেশীয় চাহিদা গত দুই বছরে ১০%-এর বেশি কমেছে; ফলে কারখানাগুলো বিদেশে পণ্য ছাড়ার পথ খুঁজছে।
বেইজিং-ভিত্তিক স্টিল মিলের একজন বিক্রয় কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “রপ্তানি আদেশ এখন প্রায় ৩ মাস এগিয়ে; দাম বিশ্ব বাজারের তুলনায় ৪০-৫০ ডলার/টন কম, তাই বিদেশি ক্রেতারা আগ্রহী।” চীনা হট-রোল্ড কয়েলের FOB মূল্য গত সপ্তাহে ৫৪০ ডলার/টন, যেখানে ইউরোপীয় মিল ৬৮০ ডলার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় মিল ৭৪০ ডলার চায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যে চীনা ইস্পাতের ওপর ১৩.৮%-২৫.৬% অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক রেখেছে; কমিশনের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “রপ্তানি ধারা অব্যাহত থাকলে নভেম্বরে নতুন সেল্ফ-ইনিশিয়েটেড তদন্ত শুরু হতে পারে, যাতে শুল্ক ৩৫%-এর উপরে যেতে পারে।” যুক্তরাষ্ট্রের স্টিল ইনস্টিটিউট জানায়, চীনা আমদানি ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে ১৮% বেড়ে ১.৯ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে; সংস্থাটি ট্রেজারি বিভাগে ৫৩% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের আবেদন করেছে।
এশিয়ার বাজারেও প্রতিরোধ তৈরি হচ্ছে। ভারত চীনা গালভানাইজড কয়েলে ২২% শুল্ক নির্ধারণ করেছে; থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম স্থানীয় শিল্ল রক্ষায় “সেফগার্ড” তদন্ত শুরু করেছে। চীনা রপ্তানিকারকরা তবুও আশাবাদী; চায়না আয়রন অ্যান্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান লি চিং বলেন, “আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার নতুন বাজারে চাহিদা বাড়ছে; আমরা বিশ্বজুড়ে ১৫০ মিলিয়ন টন রপ্তানির লক্ষ্য রাখছি”।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রপ্তানি ধারা অব্যাহত থাকলে চীনকে অভ্যন্তরীণ দক্ষতা বাড়াতে ও উৎপাদন ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে হবে। কমার্স ব্যাংকের কমোডিটি হেড নিকোলাস স্টামপ বলেন, “বিশ্ববাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের চাপ দাম কমাবে; কিন্তু শুল্ক-প্রতিরোধের ঝড়ে চীনা মিলগুলোর মুনাফা আবারও সংকুচিত হবে”। আইএমএফ-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, “একদিকে চীনা রপ্তানি ধারা, অন্যদিকে পশ্চিমা শুল্ক—এই দ্বৈত চাপ বিশ্ব ইস্পাত দাম ২০২৬ সালের মধ্যে ১৫% কমিয়ে দিতে পারে”।