যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের চায়না কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্যরা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, চীনের সঙ্গে যেকোনো নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে ‘অতিরিক্ত শিল্প উৎপাদন’ কমাতে বাধ্যতামূলক ও পরিমাণগত শর্ত অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাদের যুক্তি—স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, ইভি ব্যাটারি ও সোলার প্যানেল খাতে বেইজিংয়ের কাঠামোগত অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা (overcapacity) যুক্তরাষ্ট্রের কারখানা ও কর্মসংস্থানকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
কমিটির সিনিয়র ডেমোক্র্যাট সদস্য রাজা ক্রিশ্নামূর্তি ও শিল্লা জ্যাকসন লি সোমবার এক চিঠিতে ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ও কমার্স সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লুটনিককে জানান, “চীনের রাষ্ট্রায়িত ভর্তুকি ও অবৈধ অর্থায়নের কারণে গঠিত অতিরিক্ত সক্ষমতা কেবল ট্যারিফ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না; চুক্তিতে পরিষ্কার লক্ষ্যমাত্রা ও পাল্টা শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে”। তারা প্রস্তাব করেন—
- ২০২৭ সালের মধ্যে চীনকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন কমপক্ষে ১৫% কমাতে হবে,
- ইভি ব্যাটারি ক্ষমতা বৃদ্ধির হার বছরে ১০%-এর বেশি হতে দেওয়া যাবে না,
- চুক্তি ভঙ্গ হলে স্বয়ংক্রিয় ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হবে এবং চীনা কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্রে IPO-তে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাবে।
চিঠির অনুলিপি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রধান বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোকেও পাঠানো হয়েছে। নাভারো এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রশাসন চীনের ‘উৎপাদন-প্রথম’ কৌশলের বিরুদ্ধে ‘সব অস্ত্র’ ব্যবহার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; আমরা আইনপ্রণেতাদের পরামর্শ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছি”। ট্রেজারি ও কমার্স বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মাদ্রিদে চলমান উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে উৎপাদন সীমা ইস্যুটি ইতিমধ্যেই আলোচনায় এসেছে; বেইজিং তাৎক্ষণিকভাবে “অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো পরিমাণগত লক্ষ্য গ্রহণ”-এর বিরোধিতা করেছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনীতিক চীনের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার অজুহাতে বাজার-অর্থনীতির নিয়ম লঙ্ঘন করছেন; আমরা যেকোনো বাধ্য করে তোলা উৎপাদন ছাঁটাই প্রত্যাখ্যান করি”। চীনা শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির কাঁচা ইস্পাত উৎপাদন ২০২৪ সালে রেকর্ড ১.০৩ বিলিয়ন টনে পৌঁছেছে, যা বিশ্ব উৎপাদনের প্রায় ৫৪%।
যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ইনস্টিটিউট জানায়, চীনা অতিরিক্ত সক্ষমতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত আমদানি ২০২৩ সালের তুলনায় ১৮% বেড়েছে; ফলে অভ্যন্তরীণ কারখানায় উৎপাদন কমেছে ৭% এবং প্রায় ১৮ হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। ইউনাইটেড স্টিলওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যাককলাম ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “ট্যারিফ একা যথেষ্ট নয়; চীনকে অতিরিক্ত ক্ষমতা সরিয়ে নিতে বাধ্য করতে হবে”।
চুক্তির সম্ভাব্য বৈধতা নিয়ে আইনজীবীদের অংশে প্রশ্ন রয়েছে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক বাণিজ্য আইনবিদ অ্যানা হ্যানসন বলেন, “বিদেশি দেশের উৎপাদন পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া WTO-র নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন হতে পারে; তবে চীনের বাজার-বিচ্যুতি রোধে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা ধারা (Section 232) ব্যবহার করলে কিছুটা ছাড় পেতে পারে”।