উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন চীনের আমন্ত্রণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় উৎসবে যোগ দিতে বেইজিং সফর করবেন। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) ২৮ আগস্ট ২০২৫-এ এ তথ্য জানিয়েছে। এই সফর চীন-উত্তর কোরিয়া সম্পর্কের কৌশলগত গুরুত্ব এবং বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের মৈত্রী প্রদর্শনের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
কেসিএনএ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিম জং উন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর আমন্ত্রণে ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ বেইজিং-এ অনুষ্ঠিতব্য “চীনা জনগণের জাপানি আগ্রাসন প্রতিরোধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধের বিজয়” উৎসবে অংশ নেবেন। এই অনুষ্ঠানে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিভিন্ন দেশের নেতারাও উপস্থিত থাকবেন, যা চীন, উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত জোটকে তুলে ধরবে। এই উৎসবটি চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি এবং গ্লোবাল সাউথের সাথে কূটনৈতিক সংহতি প্রদর্শনের একটি মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চীন দীর্ঘদিন ধরে উত্তর কোরিয়ার প্রধান অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক মিত্র হিসেবে কাজ করেছে, যদিও ২০১৭ সালে পিয়ংইয়ং-এর পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপে অংশ নিয়েছিল। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কিম জং উন এবং শি জিনপিং একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন, যার মধ্যে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে কিমের চীন সফর এবং জুনে শি’র পিয়ংইয়ং সফর উল্লেখযোগ্য। তবে, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকদের প্রত্যাবর্তনের মতো বিষয় নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন দেখা গেছে।
এই সফরটি এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার মধ্যে সামরিক সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে পিয়ংইয়ং রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধে সমর্থন দিয়ে আসছে, যার মধ্যে অস্ত্র ও সৈন্য সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত। এই প্রেক্ষাপটে কিমের চীন সফর এবং বিজয় উৎসবে অংশগ্রহণ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সংহতি প্রদর্শনের একটি বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চীনের এই বিজয় দিবসের প্যারেডে উন্নত সামরিক সরঞ্জাম যেমন ফাইটার জেট, মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং হাইপারসনিক অস্ত্র প্রদর্শনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা চীনের সামরিক শক্তির প্রকাশ ঘটাবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, এই ঘটনা ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। বাংলাদেশ, যিনি চীনের সাথে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত সম্পর্ক বজায় রাখে, এই ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং বাণিজ্যের উপর সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারে। উত্তর কোরিয়া ও চীনের জোট এবং তাদের পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে উত্তেজনা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।