দক্ষিণ কোরিয়া চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অতীতের বিরোধের পর এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক উষ্ণতার ইঙ্গিত দেয় এবং দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে যখন দেশটি তার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে। অতীতে, বিশেষ করে ২০১৬-২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন থাড (THAAD) ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন নিয়ে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। এই বিরোধের ফলে চীন দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যা দুই দেশের সম্পর্কে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উভয় দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে-মিউং এর নেতৃত্বাধীন প্রশাসন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। চীন দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার, যেখানে ২০২৪ সালে প্রায় ১৮১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে দক্ষিণ কোরিয়া উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা চীনের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সুবিধার ভিত্তিতে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অর্থনৈতিক সহযোগিতা শুধু দুই দেশের জন্যই নয়, বরং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।” এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া মৎস্য, ইলেকট্রনিক্স, এবং অটোমোবাইল খাতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তবে, এই উদ্যোগের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের জোট বজায় রাখার বিষয়টিও ভারসাম্য রক্ষা করছে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট লি জে-মিউং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ওয়াশিংটনে একটি শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন, যেখানে তারা নিরাপত্তা জোট এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে, দক্ষিণ কোরিয়া চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
স্থানীয় বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ কোরিয়ার এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক হলেও, তাইওয়ান প্রণালী এবং দক্ষিণ চীন সাগরে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে এটি জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। তবুও, উভয় দেশের নেতৃত্ব এই সম্পর্কের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।